পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্ৰিংশ পরিচ্ছেদ হরিহরের বাসাটা বিশেষ ভাল নয়। নীচের তলায় সঁ্যাৎসোঁতে ঘর, তাও মাত্ৰ দুখানি, এত অন্ধকার ধোঁ হঠাৎ বাহির হইতে আসিলে ঘরের কোনো জিনিস নজরে পড়ে না। এরকম স্থানে সর্বজয়া কখনো বাস করে নাই, তাহদের দেশের বাড়ী পুৱানো হইলেণ্ড রৌদ্রহাওয়া খেলিবার বড় বড় দরজা জানােলা ছিল, সেকালের উচু ভিতের কোঠা, খটু খটু কবিত, শুকনা। এ বাসার স্যাতসেতে মেজে ও অন্ধকারে সর্বজয়ার মাথা ধরে। অপু তো মোটেই ঘরে থাকে না, সুৰ্য্যালোকপুষ্ট নবীন তরুর ন্যায় শুধু আলোর দিকে তার মুখটি থাকে ফিরানো, নিশ্চিন্দিপুরের মুক্ত মাঠে, নদীর আলো-হাওয়ায় মানুষ হইয়া এই বন্ধঘরের অন্ধকাৱে তাৱ প্ৰাণ হাঁপাইয় ওঠে, একদণ্ডও সে এখানে তিষ্ঠিত্বে পারে না। কাশী দেখিয়া সে একটু নিরাশ হইয়াছে। বড় বড় বাড়ীম্বর থাকিলে কি হইবে, এখানে বন নাই মোটেই ; সন্ধ্যার দিকে একদিন কথক ঠাকুর হরিহরের বাসায় আসিল । একথা-ওকথার পর বলিল —কৈ আপনােৱ rছলেকে দেখাচি নে ? হরিহর বলিল—কোথায় বেরিয়েচে খেলা করতে, দশাশ্বমেধ ঘাটের দিকেই বোধহয় বেরিয়েচে কথক ঠাকুর উড়ানির প্রান্তে কি দ্রব্য খুলিতে খুলিতে বলিল-আপনার ছেলের সঙ্গে বঙ ভাব হয়ে গিয়েছে মশাই-সেদিন ঘাটের কাছে ডেকে বসিয়ে অনেকক্ষণ ওর সঙ্গে কথা কইলাম-কড়ি খেলতে ভালবাসে তাই এই দুটো বড় বড় সমুদ্রের কড়ি সেদিন ব্ৰতের সিধেয় কারা দিইছিল, ভাবলাম ওকে দিয়ে আসি-রেখে দিন। আপনি, ও এলে দেবেন অগ্রহায়ণ মাসের শেষে অপু বাবাকে ধরিল সে স্কুলে ভষ্টি হইবে। বলিল-সবাই পড়ে ইস্কুলে বাবা, আমিও পড়বে—-ওই তো গলির মোড় ছাডিয়ে একটুখানি গিয়েই ভাল ইস্কুল হরিহর ছেলেকে স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিল। যদিও ছাত্রবৃত্তি স্কুল তবে ইংরাজী পাড়াও হয়। छ्न्द्र ***द्र পাঠশালা ছাড়িয়া দেওযার পরে-সে। প্ৰায় চার পাঁচ বছর হইয়া গিয়াছেএই তাহার পুনয়ায় অল্প বিদ্যালয়ে ভৰ্ত্তি হওয়া । মাঘ মাসের মাঝামাঝি কথক ঠাকুর এক টুকরা বালির কাগজ হাতে একদিন হরিহরেয় বাসায় আসিয়া হাজির। কাগজের টুকীয়া দেখাইয়া বলিল—দেখুন তো মশাই পড়ে, এই রকম যদি লিখি তবে হয় ? হরিহৱ পড়িয়া দেখিল কাশীবাসী রামগোপাল চক্ৰবৰ্ত্তী নামে কোনো লোক কথক ঠাকুরের নামে স্বগ্রামের দশ বিঘা জমি দানপত্র লিখিয়া দিতেছে, অমুক অমুক সাক্ষী, স্থান দশাশ্বমেধ ঘাট, অমুক তারিখ। কথক ঠাকুর বলিল—ব্যাপারটা কি জানেন ? আমাদের দেশে কুমুরে গ্রামের রামগোপাল চক্রোত্তি ভাৱী পণ্ডিত ছিলেন, মরবার বছর খানেক আগে আমাকে বলেন- রামধন, তোমায় তো কিছু নেই, ভাবচি তোমাকে বিঘে দশেক জমি দান করব।--