পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড)

সম্পাদকের নিবেদন

স্থায়ী সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ হ’ল লেখকের মৃত্যুর পর তঁর রচনার চাহিদা বৃদ্ধি। এর বিপরীতও দেখেছি আমৱা-লেখকের জীবদ্দশাতে পাঠকরা উঁর নাম পর্যন্ত ভুলে যান, এমন কি তার মৃত্যু ঘটলে জীবিত লেখকরা পরস্পরকে বিস্মিত প্রশ্ন করেন-'উনি কি এতদিন বেঁচে ছিলেন?' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তার গ্রন্থের বিক্রী ও চাহিদা যে পরিমাণ বেড়েছে—শিশু-স্বভাব বিভূতিভূষণ বেঁচে থাকলে, শিশুর মতোই আনন্দ প্রকাশ করতেন। এই জিনিস আমরা দেখেছি। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রেযর মৃত্যুর পরও। সাধারণত যিনি প্রথম বইতেই কেল্লামাৎ করেন, তিনি শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা নামক চঞ্চল জীবটিকে ধরে রাখতে পারেননা-কিন্তু বিভূতিভূষণ সেখানেও ব্যতিক্রম। তার জনপ্রিয়তা বেড়েই গিয়েছে, কমে নি। মৃত্যুর পর আরও বেড়েছে।

 সম্ভবত সেই কারণেই-বহুদিন যাবৎ তাঁর একটি সমগ্র রচনাসংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বোধ হচ্ছিল। অনেক রসিক পাঠক, লেখক ও সুধী ব্যক্তিও এ অনুরোধ করেছেন বার বার তার ফলেই এই রচনাবলীযর আয়োজন। আমাদের প্রয়াস-তাঁর সমগ্র রচনাই খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করা। কতদূৱ সফল হব তা জানি না। এ বিপুল দায়িত্ব। অনেক বইয়ের কপিই দুর্লভ। অনেক রচনা প্রতি সংস্করণে কিছু কিছু মুদ্রাকর-প্রমাদ জমতে জমতে ভোলানাথের ঝুলি হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলির মৌলিক সংস্করণ সংগ্রহ ক’রে সংশোধন করার। কিন্তু যেখানে মৌলিক সংস্করণেই ভুল থেকে গেছে-লেখক বা কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রুফ দেখেন নি বলে-সেগুলির সামান্য কিছু অসঙ্গতি হয়ত কিছুতেই দূর করা যাবে না।

 এই রচনাবলীর পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যে সব মনীষীর কাছেই গেছি—তারাই প্রচুর উৎসাহ দান এবং আনুকূল্য করেছেন। আচার্য স্বনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় একটি অনন্যদুর্লভ ভূমিকা লিখে দিয়ে এ রচনাবলীর গৌরব বুদ্ধি করেছেন। তিনি ঘদিও বলেছেন যে, “এ আমার বন্ধুকৃত্য”-তবুও এই বয়সে সহস্ৰ গুরুতর কর্মের মধ্যেও যে এই পরিমাণ পরিশ্রম তিনি করেছেন-এতে আমরা বিস্মিত, ষৎপরোনাস্তি কৃতজ্ঞ তো বটেই। এ ছাড়া, প্রমথনাথ বিশী, জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কালিদাস রায়, ডঃ সুকুমার সেন, ডঃ রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, ডঃ তারাপদ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতির কাছ থেকেও আমরা প্রচুর উৎসাহ, উপদেশ ও সহায়তা লাভ করেছি, সেজন্য তঁদের আন্তৱিক কৃতঞ্জতা জানাচ্ছি। এদের মধ্যে প্রমথনাথ বিশী এই খণ্ডের একটি মূল্যবান ভূমিকা লিখে দিয়ে আমাদের বিশেষ উপকৃত করেছেন।

 লেখকের স্ত্রী পূজনীয় রমা দেবীও আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। তার সহায়তা ছাড়া এ রচনাবলী প্রকাশ করা সম্ভব হত না। তবে এ তাঁদেরও কাজ-এই ভেবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিরত থাকলাম। ইতি-