S. “আমি দেবী অরণ্যানীর এই প্ৰশক্তি গান করলুম, ধিনি গন্ধাঞ্চনময়ী, সৌরতে পূর্ণ, যিনি কৃষি না ক’ৱেও বহু অল্পের অধীশ্বরী, আর যিনি সমস্ত আরণ্য মুগদের মাতা।” ভারতের মানুষ অতি প্ৰাচীন কাল থেকেই যে পরিবেশের মধ্যে পড়েছিল, দেশের আদিম অৱশ্যের পরিবেশ, তাকে ভালবাসতেও শিখেছিল। বেদ-সংহিতায় এই ভালবাসার প্রচুর নিদর্শন আছে। অথর্ববেদের ভূমি-সুক্ত বা পৃথিবী-সুক্ত পৃথিবীর প্রতি ভালবাসায় যেন ভরপুর-ষে পৃথিবী তার নিজের স্বাভাবিক দান আর মানুষের কৃষির ফল। এই দুই দিয়ে সকলের পোষণ করেন । সংস্কৃত মহাভারতের অনেক কথার পিছনে আছে। এই বনজঙ্গলের পটভূমিকা । তেমনি রামায়ণেও—রামায়ণ একাধারে মহাপুরুষ নরবীর রামচন্দ্রের আর মহীয়সী। নারী সীতার, আর প্রাচীন যুগের শাশ্বত অহল্যা অরণ্যানীর মহাকাব্য। বাণভট্রের গদ্যকাব্য “হর্ষচরিত”—একটি আধুনিক মনোভাবের পণ্ডিতের রচনা। “হর্ষচরিত" সপ্তম উচ্ছাসের শেষের দিকে, ভারতবর্ষের সাহিত্যের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী শব্দচিত্রকারের লেখায়, মধ্য-ভারতের বিন্ধ্যপৰ্বতের পাদদেশে বনপ্রাস্তুে অবস্থিত একটি গ্রামের ( “বন-গ্ৰামক” এর, অর্থাৎ ছোট জঙ্গলের গায়ের ; এক অতি জীবন্তু বৰ্ণনা আছে । খ্ৰীষ্টীয় বিংশ শতকের বাঙালী কথাকার অরণ্যপ্রিয় বিভূতিভূষণের “আরণ্যক” পাঠের আনন্দ আমরা আরও বেশী গভীর ভাবে উপভোগ করতে পায়বো, খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতকে সংস্কৃত ভাধায় রচিত বাণভট্টের এই বন-গ্ৰামকের বা বন গায়ের বর্ণনা ঘদি আমরা মন দিয়ে পড়ি । বাণভট্টের রচিত এই বন-গ্ৰামকের অপূর্ব বর্ণনাটিতে বন কেটে বসানো নোতুন গ্রামের যে দর্শনোজ্জল ( আর বর্ণনা-ভঙ্গীতে কিছুটা কল্পনোজ্জল) চিত্র তিনি ধ’রে দিয়ে গিয়েছেন, সেটিতে যেন বিভূতিভূষণের “আরণ্যক”-এরই পূর্বাভাস পাচ্ছি। বাণভট্টর ওই দুই অপরূপ গন্থকাব্য। “হর্ষচরিত” “কাদম্বরী”, প্ৰকৃতুি আর গ্রাম আর অরণ্যানীর আশ্চৰ্য্য-মনোহর বর্ণনায় ভরপুর। ভারতের সাহিত্য-প্ৰাণ,-প্ৰায় চোদ্দ শ' বছর আগে যে কথা বলবার চেষ্টা ক’রেছিল, সংস্কৃতভাষার ঐশ্বর্ধে মণ্ডিত হয়ে ভাষা-মাধুৰ্য্যের যে মন্দাকিনী-ধারা বইয়ে’ দিয়েছিল—সেই একই সাহিত্য-প্ৰাণ, বিভূতিভূষণের প্রাঞ্জল সহজ সরল বাঙলায় কি অদ্ভূত-ভাবে পুনর্জীবিত হয়েছে। প্ৰবোধেন্দু ঠাকুর রুত অতি মনোহর শৈলীর আধুনিক বাঙলায় “হর্ষচরিত"-এর যে অনুবাদ হয়েছে, তা থেকে এই গ্রাম-বর্ণনার সামান্য একটু অংশ, এই “আরণ্যক”-প্রসঙ্গের অবতারণায়, বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হবে মনে ক’রে, নীচে দেওয়া গেল : পরের দিন প্ৰভাত। হর্ষ আরোহণ ক’রলেন অশ্বে । স্নেহমুগ্ধা ভগিনী রাজ্যশ্ৰীর অনুসন্ধিৎসায় নিজেই ক’ৱেলেন প্ৰয়াণ । উত্তর-প্রদেশ থেকে বিন্ধাটকীর পদমূল। এই পথ-যাত্রার বৈচিত্র্য একটি মানসিক সম্ভোগের আহলাদ নিয়ে আসে । সয়াটীয় নয়নে উদ্ভাসিত হ’তে লাগল সমাঙ্গ এবং সাধারণ্যের নাগরিক ও অনাগরিক সৌষ্ঠব।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।