color: #fff; 25 কাজ করিয়া ফিরিতে অন্নপূর্ণার কিছু বিলম্ব হইল। বাড়ী ফিরিয়া দেখিলেন, ক্ষেস্তি উঠানের রৌদ্রে বসিয়া তেলের বাটি সম্মুখে লইয়া খোপা খুলিতেছে। তিনি তীক্ষ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চাহিয়া দেখিয়া রান্নাঘরে গিয়া উজুন ধয়াইবার উন্থোগ করিতে লাগিলেন । মেয়েকে বলিলেন---এখনও নাইতে যাসনি যে, কোথায় ছিলি এতক্ষণ ? ক্ষেন্তি তাড়াতাড়ি উত্তর দিলে—‘এই ষে ঘাই মা, এক্ষুণি যাব। আর আসব। ক্ষেন্তি স্নান করিতে যাইবার একটুখানি পরেই সহায়হুরি সোৎসাহে পনেরো বোল সের ভারী একটা মোট আলু ঘাড়ে করিয়া কোথা হইতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং সম্মুখে স্ত্রীকে দেখিয়া কৈফিয়তের দৃষ্টিতে সেই দিকে চাহিয়াই বলিয়া উঠিলেন-ওই ও পাড়ার ময়শা চৌকিদার রোজই বলে-কীৰ্ত্ত-ঠাকুর, তোমার বাপ থাকতে তবু মাসে মাসে এদিকে তোমাদের পায়ের ধুলো পড়ত, তা আজকাল তো তোমরা আর আসে না, এই বেড়ার গায়ে মেটে আলু ক’রে রেখেছি, তা দাদাঠাকুর। বরং••• অন্নপূর্ণ স্থির দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে চাহিয়া বলিলেন-বরোজপোতার বনের মধ্যে ব’লে খানিক আগে কি করছিলে শুনি ? সহায়হরি অবাক হুইয়া বলিলেন--আমি ! না। আমি কখন ? কক্ষনো না, এই তো আমি *** সহায় হরিয় ভাবে দেখিয়া মনে হুইতেছিল। তিনি এইমাত্র আকাশ হইতে পড়িয়াছেন। অন্নপূর্ণ পূর্বের মতই স্থির দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে চাহিয়া বলিলেন-চুরি তো করবেই, তিনি কাল গিয়েছে এক কাল আছে, মিথ্যা কথাগুলো আর এখন বলে না। --আমি সব জানি। মনে ভেবেছিলে আপদ ঘাটে গিয়েছে আর কি-দুর্গার মা ডেকে পাঠিয়েছিল, ও পাড়ায় যাচ্ছি, শুনলাম বরোঙ্গপোতায় বনের মধ্যে কি সব খুপি থুপ শব্দ-তখনি আমি বুঝতে পেরেছি, সাড়া পেয়ে শব্দ বন্ধ হয়ে গেল, যেই আবার খানিকদূর গেলাম আবার দেখি শম্বী--- তোমার তো ইহকালও নেই পরকালও নেই, চুরি করতে, ডাকা , করতে, ঘা ইচ্ছে কয়, কিন্তু মেয়েটাকে আবার এর মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওর মাথা খাওয়া কিসের জন্তে ? সহায় হরি হাত নাড়িয়া, বরোজপোতায় তঁহার উপস্থিতি থাকার বিরুদ্ধে কতকগুলি প্রমাণ উত্থাপন করিবার চেষ্টা করিতে গেলেন ; কিন্তু স্ত্রীর চোখের দৃষ্ট্রির সামনে তঁহার বেশী কথাও জোগাইল না বা কথিত উক্তিগুলির মধ্যে কোন পৌৰ্বাপৰ্য্য সম্বন্ধও খুজিয়া পাওয়া গেল না। -- আধা ঘণ্টা পরে ক্ষেস্তি স্নান সারিয়া বাড়ী ঢুকিল। সন্মুখস্থ মেটে আলুর দিকে একবার আড়চোখে চাহিয়াই নিরীহ মুখে উঠানের আলনায় অত্যন্ত মনোযোগের সহিত কাপড় মেলিয়া জিতেছিল। অন্নপূর্ণ ডাকিলোন-ক্ষেন্তি এদিকে একবার আয় তো, আনে যা--- মায়ের ভাক অনিয়া ক্ষেস্তির মুখ শুকাইয়া গেল-সে ইত্যন্তত করিতে করিতে মা’র নিকট আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন---এই মেটে আলুটা দু’জনে মিলে তুলে এনেছিল না ? ক্ষেপ্তি মা’র মুখের দিকে একটুখানি চাহিয়া থাকিয়া একবার ভূপতিত মোট আলুটার দিকে ঢাহিল, পরে পুনরায় মা'র মুখেয় দিকে চাহিল এবং সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ৰদৃষ্টিতে একবার
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।