পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wტ8'é তিনি আমার দিকে যেন কেমন ভাবে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলেন। তঁায় সেদিনকার সেই সহানুভূতি-বিগলিত স্নেহ-মাখানো মাতৃমুখের জলভরা কালো চোখদুটি পরবর্তী জীবনে আমার অনেকদিন পৰ্য্যন্ত মনে ছিল।••• সেদিন স্কুল থেকে আসবার সময় দেখি, বৌদিদি যেন আমার জন্ধেই অপেক্ষা করছেন। আমায় দেখে কলার পাতায় মোড়া কি একটা আমার হাতে দিয়ে বললেন-শরীরটা একটু না। সারলে, রাত্রে গিয়ে রান্না, সে পেরে উঠবে না বিমল। এই খাবার দিলাম, রাত্রে খেও । • বোধ হয় একটু আগেই তৈরী ক’রে এনেছিলেন, আমি হাতে বেশ গরম পেলুম। বাসায় এসে কলায় পাতা খুলে দেখি, খানকতক রুটি, মোহনভোগ, আর মাছের একটা ভালনা মত। তায় পয়দিন চুটির পর আসবার সময়ও দেখি বৌদিদি খাবার হাতে দাড়িয়ে রয়েছেন, আমার হাতে দিয়ে বললেন-বিমল, তুমি তোমার ওখানে দুধ মাও ? আমি বললুম-কেন, তা হ’লে দুখও খানিকটা ক'রে দেন বুঝি ? সত্যি বলছি বৌদি, আপনি আমার জন্ম অনৰ্থক এ কষ্ট করবেন না, তা হ’লে এ রাস্তায় আমি আর আসছি না। বৌদিদির গলা ভারী হয়ে এল, আমার ডান হাতটা অন্তে আন্তে এসে ধ’রে ফেললেন, বললেন- লক্ষ্মী ভাই, ছিঃ ও-কথা বলে না। আচ্ছা, আমি যদি তোমার মেজদিই হতাম, তা হ’লে এ কথা কি আজ আমায় বলতে পারতে ? আমার মাথার দিব্যি রইল, এ পথে রোজ যেতেই হবে । সেই দিন থেকে বৌদিদি রোজ রাত্রের খাবার দেওয়া শুরু করলেন। সাত আট দিন পরে রুটির বদলে কোনদিন লুচি, কোনদিন পরোটা দেখা দিতে লাগল। তার সে আগ্ৰহভরা মুখের দিকে চেয়ে আমি তাঁর সেসব ক্ষেহের দান ঠিক অস্বীকারও করতে পারতুম ন, অথচ এই ভেবে অস্বস্তি বোধ করাতুম ষে আমার এই নিত্য খাবার যোগাতে না জানি বৌদিদিকে কত অসুবিধাই পোহাতে হচ্ছে। তার পরই আখিন মাসের শেষে পূজোর ছুটি এসে পড়াতে আমি নিষ্কৃতি পেলুম। সমস্ত পূজোর ছুটিটা কি নিবিড় আনন্দোই কাটল সেবায়। আমার আকাশ বাতাস যেন রাতদিন আফিমের রঙিন ধূমে আচ্ছন্ন থাকত। ভোর বেলা উঠানের শিউলি গাছের সাদা ফুল বিছানো তলাটা দেখলে--হেমন্ত রাজির শিশিরে ভেজা ঘাসগুলোর গা যেমন শিউরে আছে, "ওই রকম আমার গা শিউরে উঠত • কার ওপর আমার জীবনের সমস্ত ভার ਸੈਕ নির্ভরতার সঙ্গে চাপিয়ে দিয়ে আমার মন যেন শরতের জলভার নামানো হালকা মেঘের মত একটা সীমাহার হাওয়ার রাজ্যে ভেসে বেড়াতে লাগল। ** ছুটি ফুরিয়ে গেল। প্ৰথম স্কুল খেলবার দিন পথে তাকে দেখলুম না। বিকালে যখন ফিরি, তখন শীতল হাওয়া একটু একটু দিচ্ছে। ---পথের ধারের এক জায়গায় খানিকটা মাটি কারা বর্ষাকালে তুলে নিয়েছিল, সেখানটায় এখন বনকচু, কাল-কাসিন্মা, ধুতুরা, কুঁচকাটা, কুমকো লতার দল পরস্পর জড়াজড়ি ক’রে একটুখানি ছোট ছোট বোপ মত তৈরী করেছে।“ শীতল হেমন্ত অপরান্ধের ছায়া সবুজ ঝোপটির ওপর নেমে এসেছে “এমন একটা মিষ্ট নিৰ্ম্মল