কাল তোমাকে দেখতে পেয়েছি। শেষরান্ত্রের কাটা-চাষের ও অকাতায়ার পেছনে তুমি ছিলে। এই শেষ রাতের আকাশের পেছনে, এই ফুল ফোটা নিমগাছের ডালের সঙ্গে, এই সুন্দর শান্ত ঘন নীল আকাশে এক হয়ে কেমন করে তুমি জড়িয়ে আছে। কত প্ৰাণী, কত গাছ” পালার বংশ তৈরী হ’ল, আবার চলে গেল-ঐ যে পায়রা দল উড়ছে, ঐ যে নারকেল গাছটার মাথা ভোরের বাতাসে কঁাপিছে, ঐ যে বন-মূলোয় ঝাড় ছাদের আলসেতে জন্মেছে, আমার ছাত্র বিভূতি-দু'হাজার বছর আগে এরা সব কোথায় ছিল ? দু'হাজার বছর পরেই বা কোথায় থাকবে ? এদের সমস্ত ছোটখাটাে সুখদুঃখ আনন্দ-হুতাশা নিয়ে ছোট্ট বুদের মত অনন্ত গহন গভীর কালসমুদ্রে কোথায় মিলিয়ে যাবে, তার ঠিকানাও মিলবে না-আবার নতুন লোকজন ছেলেপিলে আসবে, আবার নতুন ফুলফলের দল আসবে, আবার নতুন সব সুখদৈন্ত হাৰ্যহতাশা আসবে, কত মিষ্টি জ্যোৎ মা-রক্রিয় মাধবী বাতাস আবার বইবে, পুরোনো উজ্জয়িনীর কেশধূপ বুলি যেমন মন্দির ছিল, ভবিষ্যৎ কোন বিলাস উজ্জয়িনীতে নতুন কেশরাশি পুরোনো দিনের চেয়ে কিছু কম মন্দির হয়ে উঠবে না, কত গ্ৰাম্য-নদী ভবিষ্যতের অনাগত গ্রাম-বন্ধুদের মখদুঃখ সন্তার নিয়ে বয়ে চলবে।--আবার তারা যাবে, আবার নতুন দল আসবে। কিন্তু তুমি ঠিক আছ। হে অনন্ত, যুগে যুগে তুমি কখনো বদলে বাও না। সমস্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, সমান্ত ধ্বংস-সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অপরিবত্তিত, অনাহত তুমি যুগ থেকে যুগান্তরে চলেছি। এই দৃশ্যমান পৃথিবী যখন আকাশে জলন্ত বাস্পপিণ্ড ছিল, তারও কত অনন্তকাল পূর্ব থেকে তুমি আছ, এই পৃথিবী যখন আবার কোন দূর অনিৰ্দিষ্ট ভবিষ্কাতে, যখন আবার জড় পদার্থের টুকরোডে রূপান্থস্থিত হয়ে দিকহারা উষ্কার গতিতে উদভ্ৰান্ত হয়ে অনন্ত ব্যোমে ছোটাছুটি করবে, তখনও তুমি থাকবে। কালের অতীত, সীমার অতীত, জ্ঞানের অতীত কে তুমি –তোমাকে চেনা যায় না। অথচ মনে হয়, এই যেন বুঝলাম, এই যেন চিনলাম! শেষরাত্রের নদীর জলে যখন চিকচিকে মিষ্টি জ্যোৎস্না পড়ে, শেওলায় কুলে তাল দেয়, তখন মনে হয় সেখানে তুমি আছ, ছোট ছেলে তার কচি মুখ নিয়ে ভুর দুরে কচিগদ্ধ সমস্ত গায়ে মেখে যখন মরম হাতদৃষ্টি দিয়ে গলী জড়িয়ে ধরে, যেন মনে হয় সেখানে তুমি আছ, ওরায়ন যখন পৃথিবীর গতিতে সমস্ত রাজির পরে দূরে পশ্চিম আকাশে ঝুলে পড়ে, সেই ক্লীয় প্রচণ্ড অথচ না-ধয়া-দেওয়া-গতির বেগে তুমি আছ, জনহীন মাঠের ধারে গ্ৰাম্য ফুলের দল যখন ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে অকারণে হাসে তখন মনে হয় তাদের সেই সন্নল প্ৰাণের প্রাচুৰ্য -उान कथा छूमि अiछ । তাই বলছিলাম যে, কাল শেষ রাত্রে তোমাকে হঠাৎ দেখলাম। অন্ধকার প্রহরের শেষরাত্রের টাঙ্গ-তায় পার্শ্ববর্তী শুকতারার পেছনে। তোমায় প্ৰণাম করি।--
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৪১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।