পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se ভোজনপটু বা ভোজনবিলাসী---এমন কি, ঔদরিক ছিলেন। এই ভোজনপ্ৰিয়তা তার স্বাস্থ্যকে ভিতরে-ভিতরে নষ্ট ক’রে দিচ্ছিল, এটি দুই-চারজন বন্ধুর অভিমত । স্বাস্থ্যের জন্য ভোজনের আনন্দ থেকে নিজেকে বঁচিয়ে’ বঁচিয়ে চলতে হবে, এ যেন ভঁর ধাতের বাইরে ছিল । মজলিসী লোকের এটি একটি চরিত্র-রীতি ঘটে । বিভূতিবাবু যেখানেই গিয়ে হাজির হােন না কেন, তাকে পেয়ে সকলেই খুশী হ’ত। সত্যই তিনি সকলেৱ আনন্দ ব্যর্থন ছিলেন-তার নিষ্কপট ব্যবহারে, ঊার সাহিত্যিক দৃষ্টির জন্য। খুব বেশী কইয়ে-বালিয়ে ছিলেন না, ধৈৰ্য্যশীল শ্রোতা ছিলেন, —তবে উৎসাহের সঙ্গে সৰ আলোচনায় যোগ দিতে তৎপর ছিলেন। তঁর চরিত্রের এই সহজ আভিজাত্যের জন্য কেউ দ্বতীয় উপরে চটুতে পাবৃত না । সত্যই তিনি অজাতশত্রু ছিলেন। প্রকট বা প্রচ্ছন্ন সাহিত্যিক দন্থের লেশমাত্রও তার মনে ছিল না। সহজ মৈত্রী আর শ্রদ্ধা আকর্ষণের এটি ছিল একটি মস্ত কারণ । অনেক সময় তঁর অনেক কাজ ছেলেমানুষীয় পরিচায়ক ব’লে মনে হ’ত, তাতে আমরা একটু কৃপার চক্ষে তীকে দেখে হাসতুম। নানা জাতের সংস্কৃতির পরিচায়ক, বিভিন্ন ভাষার প্ৰাচীন সাহিত্য থেকে গৃহীত কতকগুলি মহাকাব্য, পাথরে খুদে আমার গৃহে বিভিন্ন ঘরের দেয়ালে বসিয়ে রেখেছি, ঘরের শোভা হিসাবে। তার মধ্যে একটি গ্ৰীক বচন বিভূতিবাবুর খুব ভাল লেগেছিল। এই বচনটি গ্রীক-নাট্যকার মহাকবি Euripide৪ এউরিপিদেস। এর একখানি নাটক থেকে নেওয়া। কয়েকটি ছত্রের এই বচনের মূল গ্ৰীকটি আমার উচ্চারণ শুনে শুনে তিনি মুখস্থ করে নেন, আর পরে দেখেছি, বিভিন্ন নিমন্ত্রণ-সভায় বা বন্ধু-গোষ্ঠীতে, পরিচিত বা অপরিচিত লোকেদের সামনে, স্বতঃপ্ৰবৃত্ত হ’য়ে গ্ৰীক ছত্ৰকল্পটি উচ্চকণ্ঠে আউড়ে শুনিয়ে” frv: õges okhema, kapiges ekhõnhedran "cscco sar, ofocc এখোন হোৱান--” ইত্যাদি। আমি সভায় বা গোষ্ঠীতে উপস্থিত থাকূলে, এই আবৃত্তির আগ্রহ তার বেশী ক’রে দেখা দিত। এটা আমার কাছে পাগলামি বোধ হ’ত । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই ছত্ৰকয়টির অন্তর্নিহিত অর্থ, যা তিনি জানতেন, তঁাকে অদ্ভুত ভাবে পেয়ে বসেছিল । এর অর্থ হচ্ছে এই ; “তুমি পৃথিবীকে বহন ক’রে আছে, আর পৃথিবীতে তোমার সূত্র বা আসন পেতে আছে; তুমি যেই হও, তোমায় জানা কঠিন , তুমি জেউস (ষ্ঠেীস্পিতা, পৃথক দেবতা) হ’তে পারে, তুমি প্ৰকৃতির বিধান হ’তে পারো, তুমি মানুষের চিৎশক্তিও হতে পারো ; তোমাকে প্ৰণাম করি ; কারণ, তুমি নিঃশব্দ পদক্ষেপে, মরণধর্ম প্রত্যেক প্ৰাণীকে তার যথাযোগ্য স্থানে পৌছে দিচ্ছ।” বোধ হয় এইরূপ একটা গভীর অনুভূতি বা উপলব্ধি তার ছিল, যে অজাত আর অজেয় শাশ্বত সত্তা বা পরাৎপর পরমেশ্বর, ষায় স্বরূপ আমরা জানি না, তিনি সমগ্ৰ অস্তিত্বকে ধ’রে আছেন, তার অন্তরে নিহিত হয়ে আছেন, আর সেই পরাৎপরই সকলের নিয়াস্তু। সেই জঙ্কই এউরিপিদেস। এর এই বাণীটি তার প্রিয় হয়েছিল।