পথেয় পাঁচালী }ଳ পুনরায় পথে বাহির হইয়া পড়িলেন, ইচ্ছা মহিল যে সম্মুখে পাঁচক্রোশ দুরের নবাবগঞ্জ বাজারের চটিতে রান্ত্রি যাপন কন্বিবেন। পথের বিপদ উহাদের অবিদিত ছিল না, কিন্তু আন্দাজ করিতে কিরূপ ভুল হইয়াছিল-কাৰ্ত্তিক মাসের ছোট দিন, নবাবগঞ্জের বাজারে পৌছিবার অনেক পূর্কে সোনাভাঙা মাঠের মধ্যে সূৰ্য্যকে ডুবুডুবু দেখিয়া ঠাঙ্গার দ্রুত পঙ্গে ইটিতে আরম্ভ করিলেন। কিন্তু ঠাকুরবিয়া পুকুরের ধারে আসিতেই উহাৱা ঠাঙান্ডেদের হাতে পড়েন। দুষ্মায়া প্ৰথম ব্ৰাহ্মণের মাথায় এক ঘা লাঠি বসাইয়া দিতেই তিনি প্রাণভযে চীৎকার করিতে করিতে পথ ছাড়িয়া মাঠের দিকে দুটিলেন, ছেলেও বাবার পিছু পিছু ছুটিল। কিন্তু একজন বৃদ্ধ অপরে বালক-ঠ্যাঙড়েদের সঙ্গে কতক্ষণ দৌড়-পালা দিবে ? অল্পক্ষণেই তাঙ্গারা আসিয়া শিকারের নাগাল ধরিয়া ঘেরাও কবিষ, ফেলিল। নিকপাষ ব্ৰাহ্মণ নাকি প্ৰস্তাব করেন যে, তাহাকে মাৱা হয় ক্ষতি নাই, কিন্তু তঁহার পুত্রের জীবনদান-বংশের একমাত্র পুত্র-পিণ্ডলোপ ইত্যাদি । ঘটনাক্ৰমে বীরু রায়ও নাকি সেদিনের দলের মধ্যে স্বযং উপস্থিত ছিলেন। ব্ৰাহ্মন বলিয়া চিনিতে পারিয়া প্ৰাণভযাওঁ বৃদ্ধ তাহার হাতে-পায়ে পডিযা অন্তত পুত্রটির প্রাণরক্ষার জন্য বহু কাকুতি-মিনতি করেন -কিন্তু সরল ব্ৰাহ্মণ বুঝেন নাই, তাহার বংশের পিগুলোপের আশঙ্কায অপরের মাথাব্যথা হুইবার কথা নহে, বরং তঁহাদিগকে ছাডিযা দিলে ঠ্যাঙাড়ে দলের অন্তরূপ আশঙ্কার কারণ আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে হতভাগ্য পিতাপুত্রের মৃতদেহ একসঙ্গে ঠাণ্ড হেমন্ত রাতে ঠাকুরবি পুকুরের জলে টোবাপনা ও শুষ্ঠােমাঘাসের দামের মধ্যে পুতিযা ফেলিবার ব্যবস্থা করিয়া বীরু রাষ্য বাটী চলিযা আসিলেন। এই ঘটনার বেশী দিন পরে নয়, ঠিক পর বৎসর পূজার সময। বাঙ্গলা ১২৩৮ সাল। বীরু রায় সপরিবারে নৌকাযোগে তাহার শ্বশুরবাড়ী হলুদ বেডে হইতে ফিরিতেছিলেন। নকীপুরের নীচের বড নোনা গঙ পাৱ হইযা মধুমতীতে পড়িবার পর দুই দিনের জোয়ার খাইয। তবে আসিয়া দক্ষিণ শ্ৰীপুরের কাছে ইছামতীতে পড়িতে হইত। সেখাঁ ন হইতে আর দিন-চারেকের পািখ আসিলেই স্বগ্রাম । . সারাদিন বাহিয়া আসিয়া অপরাঙ্কে টাকীয় ঘাটে নৌকা লাগিল। বাড়ীতে পূজা হইত। টাকীর বাজার হইতে পূজার দ্রব্যাদি কিনিষ রাজিতে সেখানে অবস্থান করিবার পর প্রত্যুষে নৌকা ছাডিয়া সকলে দেশের দিকে রওনা হইলেন। দিন দুই পরে সন্ধার দিকে ধবলচিতের বড় খাল ও ইছামতীক্স মোহানাব্য একটা নির্জন চরে জোযারেব অপেক্ষাষ নৌকা লাগাইবা রন্ধনের যোগাড় হইতে লাগিল। বড় চর, মাঝে মাঝে কাশঝোপ ছাড়া অঙ্ক গাছপালা নাই । একস্থানে মাঝিরা ও অন্তস্থানে ৰীক মাযের স্ত্রী রন্ধন চড়াইখাছিলেন। সকলেরই মন প্ৰফুল্প, দুইদিন পরেই দেশে পৌছানো যাইবে। বিশ্যে অঙ্গ পূজা নিকটে, সে আনন্দ তো আছেই। জ্যোৎ জা। উঠিয়াছিল। নোনা গাঙের জল চকু চকু করিতেছিল। হা-হু হাওয়ায় চরের কাশফুলের রাশি আকাশ, জ্যোৎস্না, মোহানার জল একাকার করিষা, উড়িতেছিল। হঠাৎ কিসের শব্দ শুনিয়া দু-একজন মাৰি, রন্ধন ছাড়িষা উঠিয়া দাড়াইযা চারিদিকে চাহিয। দেখিতে লাগিল। কাশকোপের আড়ালে এখন একটা হুটুপাটু শব্দ, একটা ভয়াৰ্ত্ত কণ্ঠ একবার অফুট চীৎকার করিয়া
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।