ইহা যথার্থ নয়। তঁহায়া পুরোহিত ও কখকের মধ্যে পার্থক্য বুঝিতে না পারিয়া ভ্ৰমে পতিত হইয়াছেন। মহানন্দ যৌবনে রাণাঘাটে মুখোপাধ্যায় পরিবারের হেমাদিনী দেবীকে বিবাহ করেন। কিন্তু অধিক বয়স পৰ্যন্ত মহানন্দের সন্তান না হওয়ায় হেমাদিনী নিজেই আগ্ৰহ করিয়া বর্ধমানের খোসযোগ-নিবাসী গুরুচরণ চট্টোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ কন্যা মৃণালিনী দেবীর সহিত স্বামীর দ্বিতীয়বার বিবাহ দেন। গুরুচরণের পৈতৃক নিবাস ছিল মূৱান্তিপুর গ্রামে। কঁাচাৱাপাড়ার সন্নিকটে ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর বিখ্যাত গ্ৰাম । ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর আউলচাঁদ ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের জন্য বিখ্যাত। বিভূতিভূষণের মাতুলালয়ের কাছেই কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ভিটা ও জন্মস্থান। কাছেই নানা বৈষ্ণবতীর্থ। নিকটেই হালিশহর ও কুমারহট্ট। শ্ৰীচৈতন্যদেব ও ঈশ্বর পুরী এবং কবিবর রামপ্রসাদ সেনের জন্ম ও কর্মের অধিষ্ঠান-ক্ষেত্ৰ। মহানন্দোয় দ্বিতীয়বার বিবাহ হয় বঙ্গাব্দ ১২৯৬ সালের ২৪শে জ্যৈষ্ঠ । পান্ত্রী মৃণালিনী দেবীয় তখন বয়স ছিল পূর্ণ ১২ বৎসর। মৃণালিনীর গর্ভেই মহানদের জ্যেষ্ঠ সন্তান বিভূতিভূষণের জন্ম হয়। বিভূতিভূষণের পরে মৃণালিনীর গর্ভে মহানন্দের আরো দুইটি পুত্র ও দুইটি কন্যার জন্ম হয় । নিয়ে তাহাদের নাম ও জন্মতারিখ দেওয়া হইল : ১। ইন্দুভূষণ (১৮ ভাদ্র ১৩০৪) ২। জাহ্নবী (৬ চৈত্র ১৩০৫) ৩। সরস্বতী (১১ই আশ্বিন ১৩০৮) ৪। নুটবিহারী (৮ শ্রাবণ ১৩১২) বিভূতিভূষণের উপনয়ন হয় ১৩১৩ সালের ৫ ফাস্তান রবিবার, পঞ্চমী তিথিতে, বারাকপুর গ্রামে (ইং ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯০৭ সাল ) । বিভূতিভূষণের অন্নপ্রাশন ও-উপনয়নে খুব ধুমধাম হুইয়াছিল বলিয়া শুনা যায়। . বিভূতিভূষণের প্রথমে শিক্ষা শুরু হয় গৃহে পিতার নিকটেই। শোনা যায় বিভূতিভূষণের জন্য প্রত্যহ একটি করিয়া “বৰ্ণ পরিচয়” লাগিতা। প্ৰত্যহ একটি করিয়া নূতন “বর্ণ পরিচয়” দিয়া বালকের পাঠ আৱন্ত হইত-সন্ধায় সেই বইয়ের বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকিস্ত না । তখন “বর্ণপরিচয়ে”র মূল্য ছিল এক পয়সা। মাসের প্রথমেই মহানন্দ সাড়ে সাত আনা পয়সা দিয়া এক মালের “বৰ্ণ পরিচয়” কিসিয়া ব্ৰাখিতেন। বিভূতিভূষণ বনগ্রাম উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে প্ৰথমে গ্রামে হরি রায়ের পাঠশালায় তারপর হুগলি জেলার সাগজ-কেওটায় এবং পিতার কলিকাতৃ প্ৰবাসকালে বৌবাজার আরগুলি লেনের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সেই সঙ্গে পাঁচ বৎসর বয়স হইতেই পিতার নিকটে সংস্কৃত শিক্ষার সূত্রপাত হয় এবং মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পাঠ আরম্ভ হয়। বহুকষ্টের মধ্য দিয়া বিভূতিভূষণকে স্কুলের ছাত্রজীবন শেষ করিতে হয়। পিতা সংসারী ছিলেন না। কবিমন-সম্পন্ন ভবঘুরে উদাসীন প্রকৃতির লোক ছিলেন। বৎসরের বেশির ভাগ সময় তিনি বাড়ি থাকিতেন না। কথকতা-কাৰ্য-ব্যপদেশে এবং শুধু ভ্ৰমণ করিবার
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।