পঞ্চম পরিচ্ছেদ ইন্দির ঠাকুরুশ ফিরিয়া আসিয়াছে ছয় সাত মাস হইল, সর্বজয়া কিন্তু ইহার মধ্যে একদিনও বুড়ীর সঙ্গে ভাল কৰিয়া কখা কহে নাই। আজকাল তাহার আরও মনে হয় যে বুঢ়ী ভাইনী সাতকুলখাগীটাকে তাহার মেয়ে যেন তাহার চেয়েও ভালবালে। হিংসা তো হয়ই, রাগও হয়। পেটের মেয়েকে পর করিয়া দিতেছে। দুবেল। কথায় কথায় বুড়ীকে সময় থাকিতে পথ দেখিবার উপদেশ ইঙ্গিতে জানাইয়া দেয়। সে পথ কোন দিকে-জ্ঞান হইয়া অবধি আজ পৰ্য্যন্ত সত্তর বৎসরের মধ্যে বুড়ী তাহার সন্ধান পায় নাই, এতকাল পরে কোথায় তাহা মিলিবে, ভাবিয়াই সে ঠাহৱ পায় না। বর্ধার শেষদিকে বুড়ী অবশেষে এক যুক্তি ঠাওরাইল। ছয় ক্রোশ দূরে ভাণ্ডারহাটিতে তাহার জামাই বাড়ী।। তাহার জামাই চন্দ্র মজুমদার বঁচিয়া আছেন। জামাইয়েন্ত্র অবস্থা বেশ ভাল, সম্পন্ন গৃহস্থ, অবশ্য মেয়ে মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জামাই-এর সঙ্গে সম্পর্ক উঠিয়া গিয়াছে- আজি পায়ন্ত্রিশ-ছত্রিশ বৎসরের আগের কথা।--তাহার পর আয় কখনও দেখাশোনা বা খবরাখবরের লেন-দেন হয় নাই। তবুও যদি সেখানে যাওয়া যায়, জামাই একটু আশ্রয় দিতে कि श्रृंध्रप्रांडी ६६५१ সন্ধ্যায় পূর্বে তাণ্ডারহাটি গ্রামে ঢুকিয়া একখানা বন্ড চণ্ডীমণ্ডপের সম্মুখে গাড়োয়ান গাড়ী দাঁড় কয়াইল । গাড়োয়ানের ডাক-হাঁকে একজন চব্বিশ-পঁচিশ বৎসরের যুবক আসিয়া বলিল-“কোথাকার গাড়ী ? তাহার পিছনে পিছনে একজন বৃদ্ধ বাড়ীর ভিতর হইতে জিজ্ঞাসা করিতে কৰিতে বাহির হইলেন-কে রাধু? জিগ্যেস কয়ো কোথা থেকে আসছেন ? বুড়ী চিনিলা-কিন্তু অবাক হইয়া রহিল--এই সেই তাহার জামাই চন্দয় । চল্লিশ বৎসর পূর্বের সে সবল দোহারা-গডেন হচেহায়া ছেলেটির সঙ্গে এই পঙ্ককেশা প্ৰবীণ ব্যক্তির মনে মনে তুলনা করিয়া শে যেন হাঁপাইয়া উঠিল। পরীক্ষণেই কেমন এক বিভিন্ন ভাবেয়া সংমিশ্রণে উৎপন্ন -লা-হাসি-না-দুঃখ গোছের মনের ভাবে সে বিহ্বলের মত ডাক ছাডিয়া কঁাদিয়া উঠিল। অনেক দিন পরে মেয়ের নাম ধরিয়া কঁাদিল । বিস্ময়বিমূঢ় চন্দ্র মজুমদার প্রথমটা আকাশ-পাতাল হাতড়াইতেছিলেন, পরে ব্যাপারটা বুঝিলেন ও আসিয়া শাশুড়ীর পায়ের ধূলা লইয়া প্ৰণাম করিলেন। একটু সামলাইয়া বুড়ী মাথায় কাপড় তুলিয়া দিয়া তাঙািগলায় বলিল-তোমার কাছে এয়েচি বাবাজী এতদিন পয়েএকটুখানি আচ্ছাযেৱ জঙ্কি-আর কড়া দিনই বা বাঁচবো ! কেউ নেই। আর ত্রিভুবনো-এই বয়সে দুটো ভাত-কাপড়ের অন্তি মজুমদার মহাশয় বড় ছেলেকে গাড়ীয় স্ত্রবাদি নামাইতে বলিলেন ও ছেলের সঙ্গে শাহুড়ীকে বাড়ীর মধ্যে পাঠাইয়া দিলেন। দ্বিতীয়পক্ষের বিধবা মেয়ে ও বড় পুত্রবধু সংসারের গৃহিণী। আন্ধও তিনটি পুত্ৰবধু আছে। নাতি-নাতনীও তিন চারিটি।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।