পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী দুই তিনটা করিয়া বীচি হাতের উল্টা পিঠে বসাইয়া উচু করিয়া চুড়িয়া দিয়া পরে হাতের সোজা পিঠ পাতিয়া ধরিতে লাগিল। মনে মনে বলিতে লাগিল-অপুকে এইগুলো দেবো।-- আর এইগুলো পুতুলের বাক্সে রেখে দেবে—কেমন বীচিগুলো তেল চুকচুক কচ্ছে-আজই গাছ থেকে পড়েচে, ভাগ্যিস আগে গেলাম, নৈলে সব গঙ্কতে খেয়ে ফেলে দিতো, ওদের রাষ্ট্রী গাইটা একেবারে রাঙ্কস, সব জায়গায় যাবে, সেবার কতকগুলো এনেছিলাম। আর এইগুলো নিয়ে অনেকগুলো হোল । সে খেলা বন্ধ করিয়া সমস্ত বীচি আবার সযত্নে আঁচলের খুটে বঁধিল । পরে হঠাৎ কি ভাবিয়া কক্ষ চুলগুলি বাতাসে উড়াইতে উড়াইতে মহা খুশির সহিত পুনরায় সোজা বাটীর বাহির হইয়া গেল । নবম পরিচ্ছেদ অপুদের বাড়ী হইতে কিছু দূরে একটা খুব বড় অশ্বথ গাছ ছিল। কেবল তাহার মাথাটা উহাদের দালানের জানালা কি রোযাক হইতে দেখা যায । অপু মাঝে মাঝে সেইদিকে চাহিয়া দেখিত। যতবার সে চাহিয। দেখে, ততবার তাহার যেন অনেক—অনেক—অনেক—দুরের কোন দেশের কথা মনে হয়—কোন দেশ, এ তাহার ঠিক ধারণা হইত না-কোথায় ধেন কোথাকার দেশ-মা'র মুখে ঐ সব দেশের রাজপুত্ৰৱদের কথাই সে শোনে। অনেক দূরের কথায় তাহার শিশুমনে একটা বিশ্বয়মাখানো আনন্দের “ভাবের স্মৃষ্টি করিত। নীল রংএর আকাশটা অনেক দূর, ঘুড়িটা - কুঠির মাঠটা অনেক দূৱ-লে বুঝাইতে পায়িত না, বলিতে পারিত না কাহাকেও, কিন্তু এসব কথায় তাহার মন ধেন কোথায় উড়িয়া চলিয়া ফাইত-এবং সর্বাপেক্ষা কৌতুকের বিষয় এই যে, অনেক দূরের এই কল্পনা তাহার মনকে অত্যন্ত চাপিয়া তাহাকে যেন কোথায় লইয়া ফেলিয়াছো-ঠিক সেই সমযেই মায়ের জন্ম তাহার মন কেমন করি যা উঠিত, যেখানে সে যাইতেছে সেখানে তাহার মা নাই, অমনি মায়ের কাছে যাইবার জন্য মন আকুল হইয়া পড়িত। কতবার যে এ রকম হুইয়াছে। আকাশের গায়ে অনেক দূরে একটা চিল উড়িয়া যাইতেছে-ক্রমে ছোট-ছোট্ট-ছেট হইয়া নীলুদের তালগাছের উচু মাথাটা পিছনে ফেলিয়া দূর আকাশে ক্ৰমে মিলাইয়া যাইতেছে -চাহিয়া দেখিতে দেখিতে যেমন উড়ন্ত চিলটা দৃষ্ট্রিপথের বাহির হইয়া যাইত, আমনি সে চোখ নামাইয়া লইয়া বাহির-বাটী হইতে এক দৌড়ে রান্নাঘরের দাওয়ার উঠিয়া গৃহকাৰ্য্যৱত মাকে জড়াইয়া ধরিত। মা বলিত-স্থাখো স্থাখো ছেলের কাণ্ড দ্য খো—ছাড়-ছােড়দেখছিল। সক উঁী হাত ?--ছাড়ো মানিক আমার, সোনা আমার, তোমায় জন্যে এই স্থাখো চিংড়িমাছ ভাজছি—তুমি যে চিংড়িমাছ গুগলোবাসে ? ইয়া, দুষ্টুমি করে না