পথের পাঁচালী ইহান্না সদর দরজা পার হইতেই সেজ-বেী মুখ ঘুৱাইয়া বলিয়া উঠিলেন-দেখতে পারিনে বাপু, চুড়িটায় যে কী স্থাংলা স্বভাব-নিজের বাড়ী আছে, গিয়ে বসে কিনে খেগে যা না ? তা না, লোকের দোয় দোয়-যেমন মা তেমনি ছা ইহাদেয় বাটীর বাহির হইয়া দুৰ্গা ভাইকে আশ্বাস দিবার সুরে বলিল-চিনিবাসের ভাৱি তো খাবার। বাবার কাছ থেকে দেখিস রখের সময় চারটে পয়সা নেবো।--তুই দুটো, আমি দুটাে। তুই আমি মুড়কী কিনে খাবো।-- খানিকটা পরে ভাবিয়া ভাবিয়া অপু জিজ্ঞাসা করিল-রথের আর কতদিন আছে রে দিদি ? দশম পরিচ্ছেদ কয়েক মাস কাটিয়া গিয়াছে। সৰ্ব্বজয়া ভুবন মুখুয্যের বাড়ীত্ব কুয়া হইতে জল তুলিয়া আনিল; পিছনে পিছনে অপু মায়ের আঁচল মুঠা পাকাইয়া ধরিয়া ও-বাড়ী হইতে আসিল। সৰ্ব্বজয়া ঘড়া নামাইয়া রাখিয়া বলিল --তা তুই পেছনে পেছনে অমন করে ঘুরতে লাগলি কেন বলদিকি ? ধরকল্পায় কাজ-কৰ্ম্ম সারবো। তবে তো ঘাটে ঘাবো ? কাজ কৱে দিবি না-না ? অপু বলিল-তা হোক-কাজ তুমি ও-বেলা ক’রো এখন মা, তুমি যাও ঘাটে। পরে মায়ের সঙ্গানুভূতি আকর্ষণের আশায় অতীব করুণম্বরে কহিল-আচ্ছা আমার খিদে কি পায় না ? আজি চারদিন যে খাইনি। -খাওনি তো করবো কি ? রোহ্মরে বেড়িয়ে বেড়িয়ে জর বাধিয়ে বসবে, বলে কথা কানে নাও নাকি তোমরা ? ছিষ্টের কাজ করবো। তবে তো ঘাটে যাণে ? বসে তো নেই ? যা, ও-রকম দুষ্টুমি করিস নে-তোমাদের ফরম্যাজ মত কাজ করবার সাধ্যি আমার নেই, ঘা অপু মায়ের আঁচল আরও জোর করিয়া মুঠা পাকাইয়া ধরিয়া বলিল-কক্ষনো তোমায় কাজ কৰ্ত্তে দেবে না। রোজই তো কাজ করে, একদিন বুঝি বাদ যাবে না ? এক্ষুনি ঘাটে যাও --না, আমি শুনবো না-•করে দিকি কেমন কাজ করবে ? সৰ্ব্বজয়া পুত্রের দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিল-ও-রকম দুটুমি করে না, ছিঃ-এই হয়ে গ্যালো বলে, আর একটুখানি সৰুত্ব করো-ঘাটে যাবো, ছুটে এসে তোমার ভাত চড়িয়ে দোব --দুষ্টুমি করে কি ? ছাড় আঁচল, ক’খানা পলতায় বড়া ভাজা খাবি বল দিকি ? ঘণ্টাখানেক পর অপু মহা উৎসাহের সহিত খাইতে বসিল। গ্লাস তুলিয়া সে ঢকু ঢাকা করিয়া অৰ্দ্ধেকখানি খালি করিয়া ফেলিয়া, পরে আরও দু'এক গ্রাস খাইয়া কিছু ভাত পাতের নীচে ছড়াইয়া বাকি জলটুকু শেষ করিয়া হাত তুলিয়া বসিল। কৈ খাচ্ছিস কৈ ? এতক্ষণ তো ভাত ভাত করে ইপাচ্ছিলোঁ-পলতার বড়া-পলতার বড়া-ঐ তো সবই ফেলে রাখলি, খেলি কি তবে ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।