পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল 8) আজ জায়গাটাতে গিয়া বসিতেই হাজারির প্রথমে মনে হইল, হোটেল চলে রাস্নায় গুণে । স্বাহারা পয়সা দিয়া খাইতে আসিবে, তাহারা চায় ভাল জিনিস খাইতে—ফেন-মিশানো ভাল খাইতে তারা আসে না। পদ্ম বিয়ের অনাচারের দরুন বেচু চকত্তির হোটেল উঠিয়া বাইবে । তাহার নিজের হোটেল ততদিনে খোলা হইয়া যাইবে । তাহার রান্নার গুণেই হোটেল চলিবে । হঠাৎ হাজারি লক্ষ্য করিল, যতীশ ভট্চাজ, চুণার খেয়াঘাটে দাড়াইয়া আছে। বোধ হয় পার হইয়া ওপারে যাইবে । —ও ভট্চাজ, মশায়—ভট্চাজ, মশায়— যতীশ চাহিয়া দেখিয়া উঠিয়া হাজারির কাছে আসিল । —কোথায় যাবেন ? —ষাচ্ছি একটু ফুলে-নবল, আমার ভায়রাভাই থাকে, তারই ওখানে । দেখলে তো হাজারি তোমাদের চকত্তি মশায়ের কাগুটা আজ ! বলি টাকা কি আমি দিতাম না ? দুপুরবেলা না খাইয়ে কি-না বল্পে অন্য জায়গায় চেষ্টা করুন গিয়ে। ভাতবেচ বামুন যদি ছোটলোক না হয়, তবে আর কে হবে! বিড়ি আছে ? দাও তো একটা— হাজারি নিকট হইতে বিড়ি লইয়া ধরাইয়া বলিল-দুশো বাট মারি শহরের মাথায় । আর থাকচি নে । যাচ্ছি ফুলে-নবল, আমার বড় ভায়রাভাই পাৰ্ব্বতী চক্কত্তি সেখানে একজন নাম-কর লোক। পাৰ্ব্বতী দাদা একবার বলেছিল ওদের জমিদারী কাছারীতে একটা চাকরি করে দেবে। পালচৌধুরীদের জমিদারী। মস্ত কাছারী। সেখানেই যাচ্ছি। একট। হিল্পে হয়ে যাবেই । হাজারি বলিল—একটা কথা বলি ভট্চাজ, মশাই, যদি কিছু মনে না করেন— স্বতীশ ভট চাজ, বলিল—কি ?—টীকাকড়ি এখন কিছু নেই আমার কাছে তা বলে দিচ্ছি। তবে দেন। আমি রাখবো না—খাওয়ার টাকা আগে শোধ দিয়ে তখন অন্ত কথা । সে তুমি বলে দিও চৰুত্তি মশাইকে । হাজারি বলিল—টীকাকড়ির কথা বলিনি। বলছিলাম, আপনি আহার করেচেন ? স্বতীশ ভট্চাজ, কিছুমাত্র না ভাবিয়া সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দিল—না। কোথায় করবো ? জত বেলায় চকত্তি মশায়ের হোটেল থেকে ফিরে আর ভাত কে আমার জন্তে নিয়ে বসে ছিল ? g হাজারি খপ করিয়া যতীশ ভটচাজের ডান হাতখানা ধরিয়া বলিল—আমার সঙ্গে চলুন ভট্চাজ, মশায়—আমি আপনাকে রোধে খাওয়াবো আজ। আম্বন আমার সঙ্গে— স্বতীশ ভট্চাজ, বলিল—কোথায় ? কোথায় ? আরে না, না হাজারি, আজ ও সব থাক, আমি জল-টল খেয়ে—আর এমন অবেলায়— হাজারি নাছোড়বান্দা। তাদের হোটেলের একজন পুরানো খন্ধের আজ পয়সা নাই