পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ বিভূতি-রচনাবলী আরও পাঁচ-ছ’দিন হাজারি ও মতি হাজতে আটক থাকিল। পুলিস বহু চেষ্টা করিয়াও ইহাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ সংগ্ৰহ করিতে পারিল না—স্বতরাং চুরির চার্জ-শীট দেওয়া সম্ভব হইল না । ছ’দিনের দিন দুজনেই খালাস পাইল । মতি বলিল—হাজারি-দা, এখন কোথায় যাওয়া যায় ? হোটেলে কি আমাদের আর নেবে ? হাজারিও জানে হোটেলে তাহদের চাকুরি গিয়াছে। কিন্তু সেখানে দু’মাসের মাহিন বাকি—বেচু চকত্তির কাছে গিয়া মাহিনা চাহিয়া লইতে হইবে । বেল। তিনট। এখন হোটেলে গেলে কর্তা মশাই থাকিবেন না—সুতরাং হাজারি সন্ধ্যার পরে হোটেলে যাইবে ঠিক করিল। কতদিন চুণার ধারে যায় নাই—রাধাবল্লভতলায় গিয়া ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া সে আপন মনে চুণীর ধারে গিয়া বসিল । কিছুক্ষণ নদীর ধারে বসিয়া হাজারির মনে পডিল, সে এত বেল পৰ্য্যস্ত কিছু খায় নাই । রতন হাজতে রোজ ভাত দিয়া যাইত, আজ দুদিন সে আর আসে নাই—কেন আসে নাই কে জানে, হয়তো পদ্ম জানিতে পারিয়া বfরণ করিয়া দিয়াছে—কিংবা হয়তো তাহীদের ভাত আনিয়া দেওয়ার অপরাধে তাহারও চাকুরি গিয়াছে। একটা পয়সা নাই হাতে যে কিছু কিনিয়া খায় । হাজতের ভাত হাজারি এক দিনও থায় নাই-আজও একজন কনস্টেবল ভাত আনিয়াছিল, সে বলিয়াছিল—তেওয়ারিজি, আমায় দুটি মুড়ি বরং এনে দিতে পারে, আমার জর হয়েছে, ভাত খাবে না। বেলা বারোটার সময় সামান্য দুটি মুড়ি থাইয়াছিল—আর কিছু পেটে যায় নাই সারাদিন । সন্ধ্যার পরে হোটেলে গিয়া দুটি ভাত খাইবে এখন, সেই ভালো । হাজারির সন্দেহ হয় বাসন আর কেহ চুরি করে নাই, পদ্ম ঝির নিজেরই কাজ। ক'দিন হাজতে বলিয়া বসিয়া ভাবিয়া তাহার মনে হইয়াছে, পদ্ম অন্য কোন লোকের যোগসাজসে এই কাজ করিয়াছে ! ও অতি ভয়ানক চরিত্রের মেয়েমানুষ, সব পারে। গত বৎসর খদেরদের কাপড়ের ব্যাগ যে চুরি হইয়াছিল—সেও পদ্ম বিয়ের কাজ—এখন হাজারির ধারণা জন্মিয়াছে। এরকম ধারণা সে বিদ্বেষবশতঃ করিতেছে না, গত ছ বৎসর হাজারি পদ্ম বিয়ের এমন অনেক কাণ্ড দেখিয়াছে যাহ। সে প্রথম প্রথম তত বুঝিত না—কিন্তু এখন দুয়ে দুয়ে যোগ দিয়৷ সে অনেকটাই বুঝিয়াছে। বৃদ্ধ বেচু চক্কত্তি পদ্ম বিয়ের একেবারে হাতের মুঠরি মধ্যে—দেখিয়াও দেখেন না, বুঝিয়াও বোঝেন না, হোটেলটির যে কি সৰ্ব্বনাশ করিতেছে পদ্ম দিদি, তাহা তিনি এখন না বুঝিলেও পরে বুঝিবেন। রতন ঠাকুর ও সেদিন ভাত দিতে আসিয়া অনেক কথা বলিয়া গিয়াছে।