পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল *Y পাবো তো। গরীব মেয়ের একটা উপকার করলেনই বা ? হাজারি হাসিয়া বলিল—আচ্ছা কথা দিয়ে গেলাম। তবে জালি মা জাজ। এলো, এসো, কল্যাণ হোক । —মনে রাখবেন মেয়ের কথা । —তুমিও মনে রেখে তোমার বুড়ে জ্যাঠামশায়ের কথা -- —ইস। আমার জ্যাঠামশায় বুড়ে বৈকি ? —ন, ছ’চল্লিশ বছর বয়েস হয়েচে—বুড়ে নয় তো কি ? —দেখায় না তো বুড়োর মত। বয়েস হলেই হোলো ? আসবেন আবার কিন্তু তা হোলে । -wiछछ भj ॥ হাজারি পুটুলি লইয়া বাটির বাহির হইল। কুসুম তাহার সঙ্গে সঙ্গে বড় রান্ত পৰ্যন্ত আসিয়া আগাইয়া দিয়া গেল। রাণাঘাট হইতে বাহির হইয়া হাজারি ইটোপথে চাকদার দিকে রওনা হইল। প্রথমে ডাকঘর হইতে বাড়ীতে দু'টি টাকা মনিঅৰ্ডার পাঠাইবার ইচ্ছা ছিল—কিন্তু ডাকঘরে গিয়া দেখিল মনিঅৰ্ডার নেওয়া বন্ধ হইয়া গিয়াছে। ডাকঘর খোলা না থাকার জন্য পরে হাজারি ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়াছিল। চাকদা যাইবার মাঝপথে সেগুন-বাগানের মধ্যে সন্ধ্যার অন্ধকার নামিল। একটা সেগুন গাছের তলায় ছ'খানি গরুর গাড়ী দাড়াইয়া আছে। লোকজন নামিয়া গাছতলায় রান্না চড়াইয়াছে। হাজারি জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, সম্মুখের পূর্ণিমায় কালীগঞ্চে গঙ্গাস্বানের মেলা উপলক্ষ্যে উহার মেলায় দেfকান করিতে ধাইতেছে । হাজারি তাঁহাদের সঙ্গ লইল । রাত্রে আহারাদির পরে সবাই গাছতলায় শুইয়া রাত্রি কাটাইল—দোকানের মালিকের নাম প্রিয়নাথ ধর, জাতিতে স্ববর্ণ বণিক, মনোহার দোকান লইয়া ইহারা মেলায় ধাইতেছে । হাজারির পরিচয় পাইয়। ধর মহাশয় প্রস্তাব করিল মেলায় কয়দিন তাহার কেনাবেচা লইয়া ব্যস্ত থাকিবে এই কয়দিন হাজারি যদি রান্না করিয়া সকলকে খাওয়ায়—তবে সে দৈনিক খোরাকি ও মেলা অস্তে কয়দিনের মজুরি স্বরূপ দুই টাকা পাইবে । প্রিয়নাথ ধরের দোকান তিনখানি—একখানি তার নিজের, অপর দুইখানি তাহার জামাই ও ভ্রাতু-পুত্রের। কম মাহিনায় যে ওস্তাদ রাধুনী পাইয়াছে, হাজারির প্রথম দিনের রন্ধনেই তাহা সপ্রমাণ হইয়া গেল। সকলেই খুব খুশি । মেলায় পৌঁছিয়া কিন্তু হাজারি দেখিল, রান্নার চেয়েও অধিকতর লাভের একটি ব্যবসা এই মেলাতেই তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে । সে জিনিসপত্র কিনিয়া আনিয়া তেলে ভাজা কচুরি লিঙ্গাড়ার দোকান খুলিয়া বলিল ধর মহাশয়দের বাসার একপাশে। বিনামূল্যে কচুরি খাইবার লোতে ধর মহাশয় কোন আপত্তি করিলেন না।