পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল ఫిలీ পদ্মৰি বলিতে বলিতে আসিতেছিল—বাবা, বেগুন আর কেনবার জো নেই রাণাঘাটের ৰাজারে। আট পয়সা করে বেগুনের সের ভূভারতে কে শুনেছে কবে-ধত ব্যাট ফড়ে স্কুটে বাজার একেবারে আগুন করে রেখেচে—সব চল্লো কলকেতা, সব চল্লে! কলকেতা—তা গরীবগুরবো লোক কেনেই বা কি আর খায়ই বা কি—ও বংশী, ঝুড়িটা ধরে নামাও ওর মাথা থেকে —দরঞ্জার চৌকাঠে পা দিয়াই সে সম্মুখে থালায় অন্নপরিবেশনরত হাজারিকে দেখিয়া থমকিয়া দাড়াইয়া একেবারে যেন কাঠ হইয়া গেল । হাজারি পদ্মঝিকে দেখিয়াই থতমত খাইয়া গেল। তাহার পুরাতন ভয় কোথা হইতে সেই মুহূর্তেই আসিয়া জুটিল। সে কাষ্ঠ হাসি হাসিয়া আমৃত আমৃত স্বরে বলিল—এই যে পদ্মদিদি ভাল আছ বেশ ? হেঁ-হেঁ—আমি— পদ্মঝি বিস্ময়ের ভাবটা সামলাইয়া লইয়া বংশী ঠাকুরের দিকে চাহিয়া বলিল—ঝুড়িটা নামিয়ে নেও না ঠাকুর ? ও সঙের মত দাড়িয়ে রইল ঝুড়ি মাথায়---মছি হোল ? তারপর হাজারির দিকে তাচ্ছিল্যের ভাবে চাহিয়া বলিল—কখন এলে ? --আজই এলাম পদ্মদিদি । —আজ এবেলা এখানে থাকবে ? বংশী ঠাকুর বলিল—হাজারিকে যে বাৰু বহাল করেছেন আবার । ও এখানে কাজ করবে । পদ্মঝি কঠিন মুখে বলিল—তা বেশ। রান্নাঘরে আর না দাড়াইয়া সে বাহিরে চলিয়া গেল । বংশী ঠাকুর অহচস্বরে বলিল–পদ্মদিদি চটেছে—বাবুর সঙ্গে এইবার একচোট বাধবে— পদ্মকে সারাদুপুর আর রান্নাঘরের দিকে দেখা গেল না। হাজারির মন ছট্‌ফটু করিতেছিল, কতক্ষণে কাজ সারিয়া কুস্কমের সঙ্গে গিয়া দেখা করবে। সে দেখিল সত্যই হোটেলের খরিদ্ধার কমিয়া গিয়াছে—পূৰ্ব্বে যেখানে বেলা আড়াইটার কমে কাজ মিটিত না, আজ সেখানে বেলা একটার পরে বাহিরের খরিদদার আসা বন্ধ হইয়া গেল । হাজারি বলিল—হঁ্যা বংশ, থার্ড ক্লাসের টিকিট মোট ত্রিশখানা ! আগে যে সত্তর-পচাত্তর খানা একবেলাতেই হোত ? এত খদের গেল কোথায় ? বংশী বলিল—তবুও তো আজকাল একটু বেড়েচে । মধ্যে আরও পড়ে গিয়েছিল, কুড়িখানা থার্ড ক্লাসের টিকিট হয়েচে এমন দিনও গিয়েচে । লোক সব যায় যদু বাড়ুষ্যের হোটেলে। ওদের এবেলা একশো ওবেলা বাট-সত্তর খদ্ধের। হাটের দিন আরও বেশী। আর খদ্ধের থাকে কোথা থেকে বলো! মাছের মুড়ো কোনোদিন খদের চেয়েও পাবে না। বড় মাছ কাটা হোলেই মুড়ো নিয়ে যাবেন পদ্মদিদি । আমাদের কিছু বলবার জে৷ নেই। তার ওপর আজকাল যা চুরি শুরু করেছে পদ্মদিদি—সে সব কথা এরপর বলবো এখন । খেয়ে নাও আগে । হোটেল হইতে খাওয়া-দাওয়া সারিয়া হাজারি বাহির হইয়া মোড়ের দোকানে এক