পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ২১৩ ঠিকমত হয়তো বোঝে না তাহার কি হইয়াছে, কিন্তু যত বয়স বাড়িবে, মা চলিয়া ৰাইবে, মুখের দিকে চাহিবার কেহ থাকিবেন, তখন সে নিজের স্বামী-পুত্রহীন জীবনের শুষ্ঠতা উপলব্ধি করিবে। তারপর যতদিন বাচিবে, সম্মুখে আশাহীন, আনন্দহীন, ধুধু মরুভূমি। তাহার মধ্যবয়সের সে শূন্তত পুরিবে কিসে? তবুও যে দুইদিন হভভাগী নিজের অবস্থা বুঝিতে না পারে, সে দুইদিনই ভাল । তা ছাড়া কি স্বখের মধ্যেই বা সে এখন আছে ? মা মধ্যে মধ্যে তাহাও ভাবেন । বীণ শ্বশুরবাড়ী হইতে অনিয়াছিল খানকতক সোনার গহনা ও নগদ দেড় শো টাকা । বিপিন ব্যবসা করিবে বলিয়া বোনের টাকাগুলি চাহিয়া লইল, অবহু তাহার উদ্দেশ্য ভালই ছিল, কিন্তু টাকা বাকি পণ্ডিয়া ক্ষুদ্র মুদখানার দোকান ডুবিয়া গেল। বীণার টাকাগুলিও ডুবিল সেই সঙ্গে । ইহার পরও বীণার দুইখানা গহনা বিপিন চাহিয়া লইয়া বিক্রয় করিয়া বলাইকে লাঙল গরু কিনিয়া দিয়াছিল চাষবাসের জন্য। তখন সংসারের ভয়ানক দুরবস্থা যাইতেছিল, সকলে পরামর্শ দিল, জমি এখনও যাহা অাছে, নিজেরা লাঙল রাখিয়া চাষ করিলে ভাতের ভাবনা হইবে না। বলাইও ধরিল, দাদা আমাকে লাঙল গরু ক'রে দাও, সংসারের ভার আমি নিচ্ছি। বিপিন স্ত্রীকে বলিল, ওগো, শোল একটা কথা । বীণাকে বল না ওর হারগাছটা দিতে । আমি এখন বেচে বলাইকে গরু কিলে দিই, তারপর বীণাকে আবার গড়িয়ে দোব। মনোরমা বলিল, তুমি বেশ মজার মানুষ তো! একবার ওর দেড় শো টাকা নিলে আর টপুড়-হাত করলে না, আবার চাইছ গলার হার । ওর ওই সামান্য ব্যাঙের আধুলি পুজি, শেধে ওকে কি পথে দাড় করাবে ? আমি ও কথা বলতে পারব না । অগত্যা বিপিনই গিয়া বীণাকে কথাটা বলিল । —তোর কোনও ভাবনা নেই আমি যতদিন আছি। বলাইকে লাঙল গরু কিনে দিই ওই হরিগাছটা বেচে, তারপর তোকে গড়িয়ে দেব এর পরে । তোর আগের টাকাও আস্তে আস্তে শোধ দোব। কিছু ভাবিস নি তুই । বীণ বলিল, আমার আবার ভাবাভাবি কি, হার দরকার হয় নাও না, তবে ব’লে দিচ্ছি, বাবার আমলে ধেমন গোল ছিল অমনই গোল তুলতে হবে কিন্তু বাইরের উঠোনে। গোল চ'লে গিয়ে চণ্ডীমণ্ডপের সামনের উঠোনটা ফাক ফাঁকা দেখাচ্ছে। আর আমি, বোঁদি, ম, তুমি, বলাই—সবাই মিলে নোঁকে ক’রে একদিন কালীতলায় বেড়াতে যাব । কেমন তো ? দিনকতক চাষবাস চলিয়াছিল ভাল। বলাই নিজে দেখিত শুনিত, গরুর গাড়ী নিজে ষ্টাকাইত । হঠাৎ বলাইয়ের অস্বখ হইয়া সে সব গেল। চিকিৎসার জন্য গরু-জোড়া বিক্রয় কfরতে হুইল । স্বতরাং বীণার হারছড়াটাও গেল ।