পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ বিভূতি-রচনাবলী বীণা-ঠাকুর ঝির সঙ্গে কথা বলিবার কোন কারণ নাই, যখন সে সোজা বাড়ীর মধ্যে আসিয়া প্রকাগুভাবেই বীণার সঙ্গে আলাপ করিতে পারে, তাহাকে তো কেউ বাড়ী ঢুকিতে নিষেধ করে নাই ! সেই রাত্রেই মনোরমা বিপিনকে কথাটা বলিবে ঠিক করিল। কিন্তু হঠাৎ রাত দশটার সময় বলাইয়ের অস্বখ বন্ড বাড়িল । ঠিক যখন সকলে খাওয়া-দাওয়া সারিয়া শুইতে যাইবে, সেই সময় । বলাই রোগের যন্ত্রণায় চীৎকার করিতে লাগিল আর কেবলই বলিতে লাগিল, সৰ্ব্বশরীর জলে গেল, ও মা ! ••• পাডার প্রবীণ লোক গোবৰ্দ্ধন চাটুজ্জে আসিলেন । পাশের বিপিনদের জ্ঞাতি ও সরিক ধনপতি চাটুজ্জে আসিলেন । পাড়ার ছেলেছোকরা এবং মেয়েরা কেহ কেহ আসিল। প্রকৃত সাহায্য পাওয়া গেল গোবৰ্দ্ধন চাটুজ্জের কাছে । তিনি পুরানো তেঁতুলের সঙ্গে কি একটা মিশাইয়া পলাইয়ের সারা গায়ে লেপিয়া দিতে বলিলেন । তাহাতেই দেখা গেল, মন্ত্রণার কিছু উপশম ঘটিল। সারারাত বিপিনের মা রোগীর বিছানায় বসিয়া তাহাকে পাথার বাতাস দিতে লাগিলেন । বীণ রাত একট: পৰ্য্যস্ত জাগিয়া রোগীর কাছে বসিয়া ছিল, তাহার মায়ের বারবার অন্তরোধে অবশেষে সে শুইতে গেল । মনোরম প্রথমটা এ ঘরে বসিয়া ছিল, কিন্তু তাহার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে মায়ের কাছছাড়া হইলেই রাত্রে কাদে, বিশেষ করিয়া ভাস্কট। বিপিনের মা বলিলেন, বউমা, তুমি ছেলেদের নিয়ে শোও গে, তবুও ওরা একটু চুপ ক’রে থাকবে । সবাই মিলে চেঁচালে বাড়ীতে তিষ্ঠনো বাবে না। তুমি উঠে যাও । .বিপিন একবার করিয়া একটু শোধ, আবাপ একটু রোগীর কাছে বসে ; এই ভাবে রাত কাটিয়া গেল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ > fদন দুই পরে বলাই একটু স্বস্ব হইলে বিপিন বাডী হইতে রওনা হইয়া পলাশপুরে আসিল । জমিদার অনাদিবাবু বেশ বিরক্ত হইয়াছেন মনে হইল ; কারণ প্রায় পনরো দিন কামাই হইয়া গিয়াছে বিপিনের । বাহিরের ধরে বসিয়া তিনি বিপিনকে জমিদারি সম্বন্ধে অনেক উপদেশ দিলেন। প্রজাদের নিকট হইতে কিস্তিখেলাপী স্বদ আদায় কি ভাবে করিতে হইবে, সে সম্বন্ধে আলোচনা করিলেন । বলিলেন, নালিশ মামলা করতে পিছুলে চলবে না। এবার গিয়ে কয়েক নম্বর মামলা রুজু ক’রে দাও, দেখি টাকা আদায় হয় কি না । বিপিন বলিল, নালিশ করতে গেলেই তো টাকার দরকার । এখন মহলের যেমন অবস্থা, তাতে আপনাদের খরচের টাকাই দিয়ে উঠতে পারি না, তার ওপর মামলার