পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার S&فی না ওসব। বিশেষতঃ মানীর সংস্পর্শে আসিয়া সে আরো ভাল করিয়া এসব বুঝিয়াছে। জীবনে অনেক ভাল জিনিস আছে –ভাল বই, ভাল গান, ভাল কথH-খাওয়া-দাওয়ার কথা মামলা মোকদমা বা পরচর্চা ছাড়াও আরও ভাল কথা জগতে আছে, মানী তাহাৰে দেখাইয়াছে। জমিদারী শাসন ছাড়াও পুরুষমানুষের জীবন আছে-রোগের সঙ্গে, মৃত্যুর সঙ্গে নিজের দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রাম করিয়া বড় হইতে চেষ্টা পাওয়াও পুরুষমানুষের কাজ। একবার চেষ্টা করিয়া দেখিবেই সে । তিন মাস কাটিয়া গিয়াছে । এই তিন মাসের মধ্যে অনেক কিছু ঘটিয়া গেল। বিপিনকে বলাইয়ের শ্ৰাদ্ধ পৰ্য্যন্ত বাড়ী থাকিতে হইল। বীণার ব্যাপার একটু আশঙ্কাজনক বলিয়া মনে হইল বিপিনের কাছে। মনোরমা প্রায়ই বলে, দুজনে গোপনে দেখাশোনা এখনও করে—মনোরম স্বচক্ষে দেখিয়াছে। বীণাকে বিপিন এজন্য তিরস্কার করিয়াছে, কড়া কথা শোনাইয়াছে, বীণা কাদিয়া ফেলে ছেলেমানুষের মত, বলে—ও সব মিছে কথা দাদা। আমি তোমার পায়ে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি পটলদার সঙ্গে আর দেখাই করিনে । কথার মধ্যে থানিকটা সত্য ছিল। বলাইয়ের মৃত্যুর পর বীণার ধারণা হইল, পটল-দার সঙ্গে গোপনে কথা বলিবার এ লোভ ভাল নয়, এ সব অনাচার, বিধবা মানুষের করা উচিত নয় যাহা, তাহা সে করিতেছে বলিয়াই আজ ভাইট মরিয়া গেল । বলাই মারা যাওয়ার ছ'দিন পরে পটল একদিন তাহাদের বাড়ীতে আসিল । বীণার মা বাহিরের রোয়াকে বসিয়া তাহার সহিত কথাবাৰ্ত্ত কহিতেছিল—বলাইয়ের মৃত্যু-সংক্রান্ত কথাই বেশী। বীণা লক্ষ্য করিল কথা বলিতে বলিতে পটল-দণ জানালার দিকে আগ্রহদৃষ্টিতে চাহিতেছে। অন্য অন্য বার এতক্ষণ বীণা মায়ের কাছে গিয়া দাড়ায়, পটলের সঙ্গে কথা শুরু করে –কিন্তু আজ সে ইচ্ছা করিয়াই যায় নাই। আর কখনো সে পটলদার সামনে বাহির হইবে না। বেড়াইতে আসিয়াছ, ভালোই, মায়ের সঙ্গে গল্পগুজব করো, চলিয়া ধাও —আমার সঙ্গে তোমার কি ? বাড়ীর মেয়েদের সঙ্গে তোমার কি ? প্রায় এক ঘণ্টা থাকিয়া পটল যেন নিরাশ মনে চলিয়া গেল। পটল যেমন বাড়ীর বাহির হইল-বীণার তখন মনে পড়িল ছাদের উপর ওবেলা বৌদিদির রাঙা পাড় শাড়ীট রৌদ্রে দেওয়া হইয়াছিল—তুলিয়া আনা হয় নাই। ছাদে উঠিয়া কাপড় তুলিতে তুলিতে সে নিজের অজ্ঞাতসারে পথের দিকে চাহিয়া রহিল। ওই তো পটলদা চলিয়া ৰাইতেছে"তেঁতুল ।