পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ২৬৭ বীণার মনে হইল সে বেশীক্ষণ আসে মাই—এবং সিড়িতে দাড়াইয়া তাহাদের শেষ কথা শুনিয়াছে। আসলে মনোরমা কিছুই শুনিতে পায় নাই—কিন্তু ছাদে উঠবার সময় বীণা কাহার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা কথা কহিতেছে জানিবার জন্য সিড়ির মুখে অন্ধকারে দাড়াইয়া ছিল। এবং অল্প কিছুক্ষণ দাড়াইবার পরেই বীণা কথা বন্ধ করিয়া তাহার সঙ্গে ধাক্কা খাইল । মনোরম বলিল—কার সঙ্গে কথা বলছিলে ঠাকুরবি ? বীণা ঝাজের সঙ্গে বলিল—জানিনে— সরো—রাস্ত দাও—উঠে এসে দাড়িয়ে তো আছ দিব্যি অন্ধকারে । বাবারে, সবাই মিলে পাও আমাকে—থেয়ে ফেল—বলিয়া সে তরতর করিয়া নামিয়া গিয়া মায়ের ঘরে একখানা ছেড়া মাছুর এককোণে পাতিয়া সোজাস্বজি শুইয়া পড়িল । মনোরমা মনে মনে বড় অস্বস্তি বোধ করিল। বীণা আবার গোপনে পটলের সঙ্গে দেখাশুনা করিতেছে তাহা হইলে ! নিশ্চয়ই পটল ও—আর কাহার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ছাদ হইতে চাপাস্বরে কথাবাৰ্ত্ত বলিবে সে ! ঠাকুরঝির রাগের কারণই বা কি আছে তাহা সে বুঝিয়া পাইল না! সে আড়ি পাতিয়া কাহারো কথা শুনিতে যায় নাই সিড়ির ঘরে। কি কথা হইতেছিল, কাহার সহিত কথা হইতেছিল তাহাও সে জানে না—তবে আন্দাজ করিয়াছিল বটে। দুশ্চিন্তায় মনোরমার রাত্রে ভাল ঘুম হইল না। ঠাকুরবি দিনকতক পটলের সামনে বাহির হইত না, তাহাতে মনোরমা খুব খুশী হইয়াছিল মনে মনে । কিন্তু এত বলার পরেও আবার যখন শুরু করিল তাও আবার লুকাইয়া, তখন ফল ভাল হইবে না। কি করা যায়, কি করিয়া সংসারে শাস্তি আনা যায় ? তাহাদের বাড়ীটাকে যেন অলক্ষ্মীতে পাইয়া বসিয়াছে। দারিদ্র্য, রোগ, মৃত্যু-অনাচার.কুৎসা কলঙ্ক ‘বীণা ঠাকুরবি ষে রাগ করে, নতুবা কাল দুপুরবেলা রান্নাঘরে বসিয়া সে বেশ করিয়া বুঝাইয়া স্বঝাইয়া বলিতে পারে। বলিতে পারে যে, এসব ব্যাপারের ফল কখনও ভাল হয় না। পটল বিবাহিত লোক, তাহাৰু স্ত্রীপুত্র বর্তমান, বীণাকে লইয়া নাচানো ছাড়া তাহার আর কি ভাল উদ্দেপ্ত থাকিতে পারে ? সমাজে থাকিতে হইলে সমাজ মানিয়া চলিতে হয়—বীণা বিধবা, বিশেষত ছেলেমানুষ, অনেক বুঝিয়া তাহাকে এখন সংসারে চলিতে হইবে।--কিন্তু বীণা শুনিবে কি তাহার হিতোপদেশ ?