পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSఆ বিভূতি-রচনাবলী —কতদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা হল ! বীণা চুপ করিয়া রহিল। —আমার কথা একটুও ভাবতে বীণ ? সত্যি বল । —বলে লাভ কি পটলদা ? যা হবার হয়ে গিয়েছে। — আমিও তো সেইজন্যে আর যাই না। তোমার নামে কেউ কিছু বললে আমার ভাল লাগে না । তাই ভেবে দেখলাম, দেখা না করাই ভাল, কিন্তু তা বলে ভেবো না যে তোমায় ভুলে গিয়েছি। বীণা কোন কথা বলিল না। পটল বলিল, আচ্ছা বীণ, তুমি যেখানে যাচ্ছ যাও—আমবাগানের মধ্যে কথা কইতে দেখলে কে কি ভাববে—যে আমাদের গায়ের লোক—এসো তুমি— —তুমি আজকাল সেই কোথায় চাকরি করতে সেখানে করো না ? —সে চাকরি গিয়েছে। এখন ব’সে আছি । —কতদিন চাকরি নেই ? —প্রায় তিন মাস। সংসারে বড় টানাটানি চলেছে—তাই যা চ্ছ মুচিপাড়ায় রঘু মুচির কাছে কিছু খাজনা পাব—গিয়ে বলি, খাজনা না দিস তো দুখানা গুড়ই দে । —আচ্ছা, এসো পটলদা। ○ বীণা বাড়ী ফিরিয়া সারাদিন কেমন অন্যমনস্ক রহিল। পটলদার চাকুরি গিয়াছে। তাহার সংসারে বড় কষ্ট। ইচ্ছা হয়—কিন্তু সে ইচ্ছায় কি কাজ হইবে ? ইচ্ছা থাকিলেও বীণার এক পয়সা দিয়াও সাহায্য করিবার সামর্থ্য নাই । তাহাকে কি পটলদা কিছু দিয়াছিল ? প্রথমে বীণা লইতে রাজী হয় নাই। বিধবা মানুষে সাবান কি করিবে ? একশিশি গন্ধ তেল শেষ পৰ্যন্ত লইয়াছিল, লুকাইয়া লুকাইয়া নারিকেল তৈলের সঙ্গে মিশাইয়া একশিশি গন্ধতেল দুই তিন মাস চাঙ্গাইয়াছিল। এক আধটা সহায়ুভূতির কথা বলা উচিত ছিল। ভূল হইয়া গিয়াছে, অত তাড়াতাড়ি আমবাগানের মধ্যে কি সব কথা মনে আসে ? পটলদার সংসারটি নিতান্ত ছোট নয়, বেচারী চালাইতেছে কি করিয়া ? আহা ! সন্ধ্যাবেলার দিকে মনোরমা নদীর ঘাট হইতে আসিল । ছেলেমেয়ে খাই খাই করিয়া জালাতন করিতেছে, মনোরমা বলিল, ঠাকুরবি, ওদের জন্যে একখোলা চাল ভেজে দাও না ? ভাত হতে এখন অনেক দেরি। খাক ততক্ষণ গুড় দিয়ে। মরছে খিদে খিদে করে।