পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার \Seo মাছ ধরিয়া বেচিয়া যাহা আয় করে, তাহাঁতেই সংসার চালাইতে বলে। অমন ভালবাসা বিশ্বেশ্বর কখনো কাহারও কাছে পায় নাই । হঠাৎ বিপিন বলিল - রাধে কে ? —ওই রাধে! আমি ওর হাতেই খাই— চাকবো কেন ? ৰে জামায় অত ভালবাসে, তার হাতে খেতে আমার আপত্তি কি ? ও আমার জন্তে কম ছেড়েচে ? ওর বাবা ভাসানপোতা বাগদী পাড়ার মধ্যে মাতব্বর লোক, গোলায় ধান আছে, চাষী গেরস্থ । খাওয়-পরার অভাব ছিল না, সে সব ছেড়ে আমার সঙ্গে এক কাপড়ে চলে এসেচে। আর এই কষ্ট এখানে —হিম জলে নেমে শাক তুলে রোজ চিংড়াঘাটায় বাজারে বিক্রি করে আসে কাঠ ভাঙে, মাছ ধরে, ধান ভানে। এত কষ্ট ওর বাপের বাড়ী ওকে করতে হোত না—তাও কি পেট পুরে খেতে পায় ? আর ওই তো ঘরের ছিরি দেখলেন–ইস্কুলের প্রভিডেন্ট ফাও থেকে পঞ্চাল্পটি টাকা পেয়েছিলাম—ভা আর আছে মোট বাইশটি টাকা – আর ঘরখানা করেছিলাম দশ টাকা খরচ করে, আমার অস্বখের সময় ব্যয় হয়েছে বারো তেরো টাকা - আর বাকী টাকা বসে বসে খাচ্ছি আজ চার মাস —তাহোলে বুঝুন পেট ভরে খাওয়া জুটবে কোথা থেকে ! লোকটার জাত নাই। বাগিনীর হাতের রান্নাও খায়। স্ত্রীলোকের ভালবাসার দায়ে কিনা শেষে জাতিকূল বিসর্জন দিল । ঔষধ লইয়া বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী চলিয়া গেল। যাইবার সময় বার বার বলিয়া গেল, কাল একবার বিপিন যেন অবশ্ব করিয়া গিয়া রোগী দেখিয়া আসে । V2 বিপিন পরদিন একাই রোগী দেখিতে গেল। জেয়ালা পৌঁছিতে প্রায় বৈকাল হইয়া আসিল, সম্মুখে জ্যোৎস্ব রাত—এই ভরসাতেই ছুপুরে আহারাদি করিয়া রওনা হইয়াছে। ঘরখানার সামনে গিয়া বিশ্বেশ্বরের নাম ধরিয়া ডাকাডাকি করিয়া উত্তর পাইল না। অগত্য সে স্বরে ঢুকিয়া দেখিল, ঘরের মধ্যে রোগিণী কাল যেমন ছিল, আজও তেমনি অঘোর অবস্থায় বিচালি ও ছেড়া কঁথার বিছানায় শুইয়া আছে। বিশ্বেশ্বরের চিহ্ন নাই কোথাও । ব্যাপার কি, মেয়েটিকে এ অবস্থায় ফেলিয়া গেল কোথায় ? বিপিন বিছানার পাশে বসিয়া রোগিণীকে জিজ্ঞাসা করিল, কেমন আছ ? মেয়েটি চোখ মেলিয়া চাহিল। চোখ দুটি জবাফুলের মত লাল । অন্মুট স্বরে বলিল, ভাল আছি । বিপিন থার্মমিটার দিয়া দেখিল জর প্রায় ১•৪-র কাছাকাছি। সে জানে, রোগীরা প্রায়ই এ অবস্থায় বলে যে সে ভাল আছে। মাথায় জল দেওয়া দরকার, তাই বা কে দেয় ?