পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ERe বিভূতি-রচনাবলী উষার বন্ধ কষ্টে বিয়ে হল সেই গোধূলি লয়েই এই গায়ের মতি বাড়ুয্যের ছেলে কিরণের সঙ্গে। কিরণ তখন সেকেও ইয়ারে পড়ে। যাই হোক, বিয়েতে আমি আনন্দ পাই নি একটুও, এমন কি বিয়েও কখনও এমন বিষন্নতার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে আর তো আমি শুনি নি। কোন প্রকারে সাত পাক ঘুরে মালা বদল করা আর নিঃশব্দে খাওয়া দাওয়া সাক্ষ করা । পরের দিন লন্ধ্যাবেলা। চুপ করে বাড়ী বসে থাকতে আর ভাল লাগল না। আন্তে জান্তে ইস্টেশানের ধারে বেড়াতে গেলুম। সভ্য হয়েছে। দূরের জিনিস ভাল রকম দেখা যায় না। একটা নারকেল গাছের মাৰাটা কাপছে, তার পাশ দিয়ে উজ্জল শুকতারাটি দেখা গেল। ইস্টিশানে ঢং ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠল । গাড়ী আসছে। ফ্ল্যাগ ভাউন করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিন হলে হয়তো ছুটে গিয়ে লাইনের ধারে দাড়িয়ে ট্রেন দেখতুম.সেটা হয়তো খটখট খটখট করে চলে যেত ; কিন্তু আজ আমার পা যেন উঠতে চাইছে না। ধীরে ধীরে আঁক-বাকা পথ বেয়ে চলেছি এমন সময়ে দেখি হেডমাস্টার মশাই ঠিক আমার সামনে । তার হাতে একটা স্বট কেশ, পেছনে চাকরের মাথায় জন্তান্ত জিনিসপত্র । তিনি আমার কাছে এলেন, বললেন, এখানে কি করছ নিৰ্ম্মল ? বাড়ী যাও, ঠাও লাগবে। তার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বেঙ্কল না। মনে হল এবার বুঝি তিনি কেঁদে ফেলবেন। জামি নিশেষে তার পদধূলি নিয়ে মাথায় ঠেকালুম। তিনি আমার পিঠটা বার দুয়েক চাপড়ে সহাস্তে বললেন, বেশ...বেশ বেশ । আমি অতিকষ্টে তার মুখের দিকে তাকালুম। র্তার চোখ চকচক করছে যেন। নিকটেই ট্রেনের শব্দ শোনা গেল। তিনি ক্ষিপ্ৰ পদক্ষেপে প্রস্থান করলেন । যাবার সময় বললেন, বেশীক্ষণ আর এখানে থেকে না, বিত্র হাওয়া দিচ্ছে। মাত্র মিনিট কয়েক ট্রেনখানা থামল । তার মধ্যেই ওঠানামা শেষ হয়ে গেল । আবার সেই জ্বরস্ত ট্রেন হু হু করে ছুটে চলল। মাথার ওপর দিয়ে ডানার ঝটাপটি করতে করতে একটা পেচা উড়ে গেল। আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে কয়েকবিন্দু অশ্র করে পড়ল । তিরোলের বালা মার্টিন কোম্পানীর ছোট লাইন । গাড়ী ছাড়বার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে, এখনও ছাড়বার ঘণ্টা পড়ে নি, এ নিয়ে গাড়ীর লোকজনের মধ্যে নানা রকম মতামত চলেছে। মশাই বড়গেছে নেমে যাব প্রায় পাঁচ মাইল । চারটে বাজে—এখনও গাড়ী ছাড়বার