পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీNS বিভূতি-রচনাবলী এতক্ষণ ভেলি প্যাসেঞ্চারদের গল্পগুজব শুনতে শুনতে আসছিলাম বেশ, এখন তারা সবাই নেমে গিয়েছে, আমি প্রায় একাই—এখন স্বভাবতই যুবক ও মেযেটির প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট হলো। মেয়েটি বিবাহিতা নয়। সে তো বেশ দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে। তবে ওদের সম্বন্ধ কি ভাইবোন ? কিংবা মামা-ভাগ্নী ? মেয়েটি বেশ স্বন্দরী । ছোকরা মেয়েটিকে ভুলিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে না তো ? আশ্চৰ্য্য নয়। আজকালকার ছেলেছোকুরাদের কাও তো ! যাকগে, আমার সে-সব ভাবনার দরকার কি ? নিজের কি হবে তার নেই ঠিক । সন্ধ্যা তো হয়ে এলো। মাসীমাদের গ্রাম স্টেশন থেকে দুই-তিন মাইল, পথও স্বগম নয়। ট্রেন আঁটপুর এসে দাড়াল, জাঙ্গিপাড়ার পরের স্টেশন । তারপর ছাড়ল । বড় বড় ফাকা রাঢ়দেশের মাঠে সন্ধ্যা নেমে আসছে, লাইনের ধারে কচিৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষাগী । লাউলত চালে উঠেছে। একটা ছোট্ট গ্রাম্য হাট ভেঙে লোকজন ধাম-চেঙারি মাথায় ফিরছে—আবার মাঠ, জামগাছের মাথায় কালো কালো বাদুড় উড়ে এসে বসছে, খালের পারে মশাল জেলে জেলেরা মাছ ধরবার চেষ্টা করছে। আবার সহযাত্রীদের দিকে চাইলাম । দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। কিন্তু দুজনেই জানাগার বাইরে চেয়ে রয়েছে। একটা কথাও শুনলাম না ওদের মধ্যে । ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে পালাতে পালাতে দু-জনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে! বেশ স্বন্দর চেহারা দুজনেরই। না, মামাভাগ্নী বা ভাইবোন নয়। নিয়ে পালানোই ঠিক। কিন্তু এদিকে কোথায় যাবে ওরা ? মার্টিন কোম্পানীর ছোট লাইন তো আর জুটো স্টেশন গিয়ে রাঢ়দেশের অজ পাড়াগ আর দিগন্তব্যাপী মাঠের মধ্যে শেষ হয়েছে। এ দুটি শোঁখীন পোশাক-পরা তরুণ-তরুণীর পক্ষে সে অঞ্চল নিতান্ত খাপছাড়া ও অনুপযোগী । যাক গে, আমার কেন ও-সব ভাবনা ? পিয়াসাড়া স্টেশনের সিগষ্ঠালের সবুজ আলো দেখা দিয়েছে। সামনে ভয়ানক অন্ধকার রাত্রি, নিতান্ত দুর্ভাবনায় পড়ে গেলাম। রাঢ় দেশের মাঠের উপর দিয়ে রাস্তা, সঙ্গে ব্যাগে কিছু টাকাকড়ি আছে, শুনেছি হুগলী জেলার এদিকে চুরি-ডাকাতি নাকি অত্যন্ত বেশ । মেসোমশায়ের চিকিৎসার জন্তে মাসীমা কিছু টাকার দরকার বলে লিখেছিলেন। মা-ই টাকাটা দিয়েছে। ধনে প্রাণে না মাল্লা পড়ি শেষকালে ! হঠাৎ আমার সহযাত্রী যুবকটি আমার দিকে চেয়ে বললে –চাপাডাঙা ইস্টশান থেকে নদৗটা কত দূরে বলতে পারেন স্তার ? —নদী প্রায় আধ মাইল । —নৌকা পাওয়া যায় খেয়ায় ? —এখন নদীতে জল কম। তবে নৌকাও বোধ হয় আছে। যুবকটি আর কোন কথা না বলে আবার বাইরের দিকে চেয়ে রইল। আমার অত্যন্ত