পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী \రి$8 কথা না বলে চুপ করে রইলাম। কি জানি মেয়েটির কেমন মেজাজ, কোন কথা তার মনে কি ভাবে সাড়া জাগাবে যখন জানি না তখন একদম কথা না বলাই নিরাপদ । মনে যনে ভাবলাম, এমন স্বন্দর মেয়ে কি খারাপ অদৃষ্ট নিয়েই এসেছিল পৃথিবীতে যে তার অমন স্বন্দর প্রাণভরা হাসি, তাতে মনে আনন্দ না এনে আনে ভয় ? গাড়ীতে কিছুক্ষণ কেউ কথা বললে না—সবাই চুপচাপ। মাঠ ভেঙে গরুর গাড়ী আপন মনে চলছে, বোধ হয় আমার একটু তন্দ্রাবেশ হয়ে থাকবে, হঠাৎ কেন যেন ঘুম ভেঙে গেল। গাড়ীর ছইয়ের মধ্যে অন্ধকার, আমার মনে হ’ল সেই অন্ধকারের মধ্যে তরুণী এবং তার দাদার মধ্যে যেন একটা হাতাহাতি ব্যাপার চলছে । তরুণীর মুখের কষ্টকর 'আঃ' শব্দ আমার কানে যেতেই আমি পেছন ফিরে চাইলাম ওদের দিকে, কারণ আমি বসেছি ছইয়ের সামনে, আর ওরা বসেছে গাড়ীর পেছন দিকটায়, সেদিকে বেশী অন্ধকার, কারণ ছইয়ের ও-দিকটা চাচের পর্দা আঁটা । আমি কোন কথা বলবার পূৰ্ব্বেই যুবকটি চাপা উদ্বেগের স্বরে বললে—ধরুন, ওকে ধরুন, ও গাড়ী থেকে নেমে পড়তে চাইছে— চাপ স্বরে বলবার কারণ বোধ হয় গাড়ীর গাড়োয়ানের কানে কথাটা না যায় । আমি হতভম্ব হয়ে মেয়েটির গায়ে কি করে হাত দেব ভাবছি, এমন সময় যুবকটি বেদনাৰ্ত্ত কণ্ঠে উন্থ-হু-হ' বলে উঠল। পরক্ষণেই বললে—কামড়ে দিয়েছে হাত—ধরবেন না, ধরবেন না ততক্ষণ গাড়োয়ান গাড়ী থামিয়ে ফেলেছে । আমাদের দিকে চেয়ে বললে—কি বাৰু? কি হয়েছে ? গাড়োয়ানের কথার উত্তর দেবার সময় বা স্বযোগ তখন আমার নেই। কারণ মেয়েটি আমায় ঠেলে বাইরের দিকে আসতে চাইছে অন্ধকারের মধ্যে । ওর দাদা বললে—ওর চুল ধরুন—গায়ে হাত দেবেন না, কামড়ে দেবে— কিন্তু আমি কোন কিছু বাধা দেবার পূর্বেই মেয়েটি আমাকে ঠেলে গরুর গাড়ীর সামনের দিকে গিয়ে পৌঁছল এবং গাড়ী থেকে লাফ দিয়ে পড়ল। হতভম্ব গাড়োয়ান গরুর কাধ থেকে জোয়াল নাবাবার পূৰ্ব্বেই আমি ও মেয়েটির দাদা দু-জনেই গাড়ী থেকে লাফিয়ে পড়লাম । মাঠের মধ্যে অন্ধকার তত নিবিড় নয়, কিন্তু মেয়েটির কোন পাত্তা কোন দিকে দেখা গেল না । আমার বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেয়েছে এবং বোধ হয় মেয়েটির দাদারও— এই সময়ে কিন্তু আমাদের গাড়োয়ান যথেষ্ট সাহস ও উপস্থিত-বুদ্ধির পরিচয় দিলে। সে ততক্ষণে ব্যাপারট। আন্দাজ করতে পেরেছে । তিরোলে যারা যায়, তাদের মধ্যে কেউ না কেউ যে অপ্রকৃতিস্থ থাকবেই, এ তথ্য তাদের অজানা নয়, তবে আমাদের তিনজনের মধ্যে কে সেই লোক, এটাই বোধ হয় সে এতক্ষণে ঠাওর করতে পারে নি । £