পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী - w®ፃእ শুনতে পেলুম না—আমিও পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম ভাঙল খুব ভোরে । পাশের কামরায় দোর তখনও বন্ধ। আমি উঠে হাতমুখ ধুয়ে মাঠের দিকে বেড়াতে গেলুম। আধঘণ্টা বেড়ানোর পরে ফিরে এসে দেখি তখনও ওরা কেউ ওঠে নি—এমন কি বাষ্ঠীর লোকও না। আরও আধ ঘণ্ট। পরে গৃহস্বামী রসিক ধাড়া উঠে বাইরের ঘরের দাওয়ায় এসে বসল। আমায় বললে—ঘুমুলেন কেমন বাবু মশা কামড়ায় নি । এরা এখনও ঘুমুচ্ছেন বুঝি } রসিকের সঙ্গে কিছুক্ষণ চাষবাসের গল্প করলাম। তার প্ররে সে উঠে কোথাও বেরিয়ে গেল । এদিকে প্রায় আটটা বাজল। তখনও পূর্ণিমা বা তার শিদার ঘুম ভাঙে নি। সাড়ে আটটার সময় রসিক ফিরে এল। গ্রীষ্মকাল, সাড়ে আটটা দস্তুরমত বেল, খুব রোদ উঠে গিয়েছে চারিধারে । রসিক আবার জিগ্যেস করলে এ রা এখনও ওঠেন নি ? আমি বললাম-কই না, ওঠে নি তো । গরমে সারারাত ঘুম হয় নি বোধ হয়, ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে আর কি। আমার কাহিনী শেষ হয়ে এসেছে। বেলা ন-টার সময়ও যখন ওদের সাড়া-শষ শোনা গেল না তখন আমি দরজায় ঘা দিলাম। ঘরের মধ্যে মাম্বধ আছে বলেই মনে হলো না। তখন বাধ্য হয়ে আমি পশ্চিম দিকের ছোট জানালাটা দিয়ে উকি মেরে দেখতে গেলাম— ঘরের মধ্যে একটি মেয়ে নিদ্রিতা, এ অবস্থায় জানালা দিয়ে চৈয়ে দেখতে দ্বিধা বোধ করছিলাম কিন্তু একবার দেখাটা দরকার। ব্যাপার কি ওদের ? জানালা দিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি চীৎকার করে উঠেছিলাম বোধ হয়, ঠিক বলতে পারি নে। কারণ আমারও কিছুক্ষণের জন্যে বুদ্ধি লোপ পেয়েছিল, কি যে ঘটেছে, কি না ঘটেছে আমার খেয়াল ছিল না। জানাল দিয়ে যা দেখলুম তা এই ৷ প্রথমেই আমার চোখে পড়ল ঘরে এত রক্ত কেন ? চোখে ভুল দেখলাম না কি ? কিন্তু পরমুহূর্তেই আর সন্দেহের অবকাশ রইল না। ঘরে একখান চৌকি পাত, পূর্ণিমার দাদা চৌকির উপরকার বিছানায় উপুড় হয়ে কেমন এক অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে শুয়ে, বিছানা রক্তে ভাসছে, মেঞ্জেতে রক্ত গড়িয়ে পড়ে মেঙ্গে ভাসছে - আর পূর্ণিমা দেওয়ালের ধারে মেজের ওপর পড়ে আছে, জীবিত কি মৃত বুঝতে পারলাম না। একটা পাশবালিশ চৌকির ওপর থেকে যেন ছিটকে পূর্ণিমার দেহের কাছে পড়ে, সেটাও রক্তমাখা । আমার চীৎকার অনেক দূর থেকে শোনা গিয়েছিল নাকি। লোকজন চারিধার থেকে এসে পড়ল। আমার জ্ঞান ছিল না, মাথায় জলটল দিয়ে আমায় সকলে চাঙ্গ করে দশ-পনেরো মিনিট পরে । এদিকে দরজা ভেঙ্গে সকলে ঘরে ঢুকল। তারা দেখলে পূর্ণিমার দাদার গলায়, কাধে ও