পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰেণীগীর ফুলবাড়ী Vలి করিতে লাগিলাম। ঘষার বুক হইতে তাহার প্রাণের পুত্তলীকে দুর্জয় বিক্রমে ছিনাইয়া লইলাম। নিশ্চেভন রমার শরীর স্পদিত হইল। সে কাতর ডাগর রাঙা চোখস্তুটি তুলিয়া মিনতি করিল, ন!—না-না। আমি যেতে দেব না। ক্ষুর্তের জন্য আমার হাত অবশ হইল, সমস্ত কর্মশক্তি শিথিল হইল। ভবতারণ কহিল, পৰ মাটি করে ফেলছ খুড়ে । পুরুষমানুষের আত কোমল হলে চলে না। সরে দ্বিকিনি। স্বমা মাগো বলিয়া মেঝের উপর আছড়াইয়া পড়িল। আমার স্ত্রী ছুটিয়া আসিয়া আমাদের পা আঁকড়াইয়া ধরিল, কোথায় নিয়ে যাচ্ছ সোনামাণিকে আমার ? আমি প্রাণ থাকতে যেতে দেব না । তার আগে আমার মরণ হোক গে । তাহার কথায় কর্ণপাত করিলাম না। অবকাশও আর ছিল না। সকলে একবাক্যে স্বীকার করিল। ই, মার চেয়ে মেয়েটাকে বেশী ভালবাসত সরোজিনী —আমার সহধৰ্ম্মিণী । আঘাতটা নাকি তাহাকেই বেশী করিয়া হানা দিয়াছে। পাত দিন সাত রাত্রি বরিয়া সরোজিনী একটানা স্বরে শোক করিয়া চলিল। মুখে তাহার থান্ড রুচিল না--রাত্রে ঘুমের ব্যাঘাত হইল-“মধ্যাহ্নে সাংসারিক কর্মে অবহেলা করিয়া মাঝে মাঝে চীৎকার করিতে লাগিল। সেই ফটোখানি বুকে চাপিয়া কমলিকে কতরূপে কত ছলে এই ধরাতলে পুনরায় ফিরিয়া আসিবাৰ জন্ত অনুরোধ করিতে লাগিল। তাহার ক্লাস্তিহীন শোকের গভীরতা দেখিয়া আমারই ভাবন হইল। একদিন বলিলাম, সরে, তুমি একটা কথা শোন } সে অশ্র-সজল চোখ দুটি তুলিয়া বলিল, কি ? বলিলাম, নিজেকে তোমার বঁাচতে হবে । বল, এমনি করে খাওয়া-দাওয়া ভ্যাগ করলে কি কমলি ফিরে আসবে ? না আসতে পারে ? সরোজিনী অসহায়ের মত হতাশ স্বরে বিষন্নভাবে বলিল, সত্যি আর সে আসবে না ? বলিলাম, পাগল! কখন কি কেউ এসেছে ? তুমি জেনেশুনে এমন ছেলেমানুষের মত কাজ কর। লক্ষ্মীটি আমার কথা শোন, ছুটি খেয়ে নাও, কথার অবাধ্য হয়ে না। কত সাধ্য-সাধনা করিলাম। আশপাশের কয়েকজন প্রতিবেশী আসিয়া অজস্র সাত্বনা দিতে লাগিল। তখন স্ত্রী বহুকষ্টে জীবনধারণের জন্তই যা দুটি অন্ন মুখে দিল । সরোজিনীর শোকাতিশয্যে সকলেই রমার কথা তুলিয়া গিয়াছিলাম। কমলির বিচ্ছেদ-বেদনায় তাহার ষে বশি নাড়ী মোচড়াইয়া অসংখ্য ক্ষতের স্বষ্টি করিতে পারে, যাহা কোনরূপ প্রলাপেই আরোগ্য হইতে পারে না - তাহ ভাবিবার আমাদের ফুরসৎ ছিল না। এই ঘটনার মাস দেড়েক পর একদিন জাপিল হইতে ফিরিয়া আমি স্ত্রীর পানে চাহিয়া আমাক হইয়া গেলাম। তাহার মুখ ছভাবনায় শুকাইয়া এতটুকু হইয়া গিয়াছে। হাত-মুখ ধুইয়া বসিতেই বলিল, একটা কথা ৰলি শোন। হেসে উড়িয়ে দিও না।