পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ృey বিভূতি-রচনাবলী সতীশ অঙ্ক পাচকের দিকে চাহিয়া বলিল—শোন কাৰ্ত্তিক, শোন। আমি বলছিলাম না তোমায় জল ঢালবার সময় ষে এতে প্যাজ উঠেছে আর মাংস নরম হবে না ? অার কর্তামশায় না দেখে কি করে বুঝে ফেলেচেন দ্যাখ। ওস্তাদ বটে আপনি কৰ্ত্ত । হাজারি হাসিয়া কি একটা বলিতে যাইতেছিল, এমন সময় চট্টগ্রাম মেল আসিয়া সম্পকে প্ল্যাটফর্শ্বে ঢুকিতেই কথার স্বত্র ছিড়িয়া গেল। হোটেলের লোকজন অন্যদিকে বাস্তু হইয়া পড়িল । বেশ ভালো ঘর। বিজলী আলো জলিতেছে। মাৰ্ব্বেল পাথরের টেবিলে বাবু খরিদ্ধারের খাইতেছে চেয়ারে বসিয়া । ভীষণ ভীড় খরিদ্ধারের—ওদিকে বনগা লাইনের ট্রেনও আসিয়া দাড়াইয়াছে। কলরব, হৈ-চৈ, ব্যস্ততা, পয়সা গুনিয়া কুল করা যায় না—এই তো জীবন। বেচু চকত্তির হোটেলের রান্নাঘরে বসিয়া হাতাবেড়ি নাড়িতে নাড়িতে এই রকম একটা হোটেলের কল্পনা করিতে সে কিন্তু কখনও সাহস করে নাই। এত মুখও তার অদৃষ্টে ছিল ! পয়দিদির কত অপমান আজ সার্থক হইয়াছে এই অপ্রত্যাশিত কৰ্ম্মব্যস্ত হোটেল-জীবনের মধ্যে ! আজ কাহারও প্রতি তাহার কোন বিদ্বেষ নাই । হঠাৎ হাজারির মনে পড়িল চাকদহ হইতে ইটোপথে গোপালনগরে যাইবার সময় সেই ছোট গ্রামের গোয়ালাদের বাড়ীর বন্ধুটির কথা। হাজারি তাহাকে কথা দিয়াছিল তাহার টাকা হাজারি ব্যবসায়ে খাটাইয়া দিবে। সে কাল যাইবে । গরীব মেয়েটির টাকা খাটাইবার এই ভাল ক্ষেত্র । বিশ্বাস করিয়া দিতে চাহিল হাজারির দুঃসময়ে-স্বসময়ে সেই সরলা মেয়েটির দিকে তাহাকে চাহিতে হইবে। নতুবা ধৰ্ম্ম থাকে না। পরদিন সকালেই হাজারি নতুন পাড়া রওনা হইল। চাকদা স্টেশন পৰ্য্যস্ত অৰণ্ড ট্রেনে আসিল—বাকী পথটুকু হাটিয়াই চলিল । সেই রকম বড় বড় তেঁতুল গাছ ও অন্যান্ত গাছের জঙ্গলে নিমানেই এ পথে অন্ধকার । হাজারির মনে পড়িল সেবার যখন সে এ পথে গিয়াছিল, তখন রাণাঘাট হোটেলের চাকুরি তাহার সবে গিয়াছে—হাতে পয়সা নাই, পথ ইটিয়া এই পথে সে চাকুরি খুজিতে বাহির छ्रेब्रांहिण । चांद्र चांछ ? আজ অনেক তফাৎ হইয়া গিয়াছে। এখন সে রাণাঘাটের বাজারে দুটি বড় হোটেলের মালিক । তার অধীনে দশ-বারে! জন লোক খাটে। যে মেয়েটির জন্ত আজ তার এই উন্নতি, হাজারির সাধ্য নাই তাহার বিন্দুমাত্র প্রত্যুপকার গে করে—অতসী-মা বড়মানুষের মেয়ে, তার উপর সে বিৰাহিতা—হাজারি তাহাকে কি দ্বিতে গারে ? কিন্তু তাহার বদলে যে দুটি-একটি সরলা দরিদ্র মেয়ে তাহার সংস্পর্শে জাসিয়াছে, সে তাহাজের ভাল করিবার চেষ্টা করিতে পারে। নতুন পাড়ার গোয়ালা-বউটি ইহাদের মধ্যে একজন। নতুন পাড়া পৌঁছিতে বেলা প্রায় ন’ট বাজিল। গ্রামের মধ্যে হঠাৎ না চুকিয়া হাজারি পথের ধারের একটা তেঁতুল গাছের ছায়ায় কাহাদের একখানা গরুর গাড়ী পড়িয়া