পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী 8©ግ যেন অতি আপনার জনটির জীবনাস্তের সম্ভাবনা । সপ্তানের রোগশয্যাপার্থে লেবারত মাতার মুখখানিও বুঝি এইরূপেই উদাস হইয়া থাকে। তাহার বত্রিশ নাড়ী এমন করিয়াই ধার বার মোচড়াইয় উঠে। রমার স্বামী কহিল, কুকুর-কুকুর করে তুমি খেপলে নাকি ! রমা কুকুরের ক্ষত পরিষ্কার করিতে করিতে কহিল, সত্যি বেবী বঁাচবে না ? তাহার বিষাদ-কাতর চোখ দুটির পানে তাকাইয়া, স্বামী বেদনা বোধ করিল, স্ত্রীকে সাত্বনা দিয়া বলিল, ওর চেয়ে ভাল কুকুর এনে দেব রমা। ষত দাম লাগে দেওয়া যাবে। রম একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বেবীর গা মূছিভে মুছিতে বলিল, আহ, বাছার আমার সব হাড় কখানা বেরিয়ে গেছে । ইহার দুই দিন পরই বেবীর ইহলীলা সাঙ্গ হইল। সকালে রমা তাহার কাঠের ঘরের দরজা খুলিয়া শিরে করাঘাত করিয়া বসিল তাহার অত সাধের বেবীর মৃতদেহ পড়িয়া রহিয়াছে। অসংখ্য লাল পিপীলিকায় সেই কদাকার, হাড়-বার করা রোমা-ওঠা দেহটি ছাইয়া ফেলিয়াছে। রমা সেই বাক্সের উপর উবু হইয়া পড়িয়া আৰ্ত্তকণ্ঠে বিনাইয়া বিনাইয়া শোক প্রকাশ করিভে লাগিল, ওগো, আমি কাকে নিয়ে থাকব গো ? বেণীগীর ফুলবাড়ী মুঙ্গেরের কষ্টহারিণী ঘাটে রোজ সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে ললিতবাবুর দেখা হইত। আমি পিসিমার বাড়ী বেড়াইতে গিয়াছিলাম। পশ্চিমের শহরে তাহার পূৰ্ব্বে কখনও বেড়াইবার অভিজ্ঞতা ছিল না, আমার এক বন্ধু আসিবার সময় বলিয়াছিল—ওখানে জুতার কালি দেওয়ার কোন দরকার হবে না দেখো । দেখিলাম, ব্যাপার তাই বটে। লাল খুলা মাখিয়া জুতার যে দশা হয় পনেরো মিনিট রাস্ত চলিবার পরেই, তাহাতে জুতায় কালি দিবার উৎসাহ ক্রমে কমিয়া গেল। শহরের মধ্যে বা বাহিরে যে কোন জায়গাতেই ধান, সৰ্ব্বত্র ধুলা। ক্রমে বেড়াইবার উৎসাহও কমিয়া আসিল । তখন সন্ধ্যার পরে গঙ্গার ধারেই দেখিলাম বেড়াইবার প্রকৃষ্ট স্থান। এদিক ওদিক বেড়াইয়। কষ্টহারিণীর ঘাটের সিড়ির উপর অনেক রাত পৰ্য্যস্ত এক বসিয়া থাকিতাম । একদিন পাশে এক প্রৌঢ় বাঙ্গালী ভদ্রলোক আসিয়া বসিলেন। কথায় কথায় আলাপ হইলে জানিলাম, তাহার নাম ললিতমোহন ঘোষাল, বাড়ী হুগলী জেলায়—ভবঘুরে লোক, আগে ছিলেন বৰ্দ্ধমান টাউনে, ম্যালেরিয়ায় স্বাস্থ্যহানি হওয়ায় পশ্চিমে আজ প্রায় দশ-বার বৎসর জাগিয়া বাস করিতেছেন। ক্রমে ললিতবাবুর সহিত প্রত্যহ দেখা হুইত, ঘাটে বসিয়া গল্প করিতাম অনেক রাত পৰ্য্যস্ত । একদিন তিনি আসিয়া জামায় বলিলেন—আপনি একজন সাহিত্যিক, এ কথা তো এতদিন আমায় বলেন নি ?