পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So বিভূতি-রচনাবলী সেই বুদ্ধা হাজারির মাকে ওই একটিমাত্র জিনিস শিখাষ্টয়াছিলেন এবং সেই একটি জিনিস রাধিবার গুণেই হাজারির মায়ের নাম ও-দিকের আট-দশখানা গ্রামে প্রসিদ্ধ ছিল। শুনিতে অতি সামান্ত জিনিস—নিরিমিষ চচ্চডি, ওর মধ্যে আছে কি ? কিন্তু এ-কথার জবাব পাইতে হইলে হাজারির মায়ের হাতের নিরিমিষ চচ্চড়ি খাইতে হয় । ঃখের বিষয় তিনি আর বঁচিয়া নাই, ও-বৎসর দেহ রাথিয়াছেন । হাজারি মায়ের রন্ধন-প্রতিভা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করিয়াছে—মাংস, মাছ সবই রাখে ভাল—কিন্তু তার হাতের নিরিমিষ চচ্চডি এত চমৎকার যে, বেচু চক্কত্তির হোটেলে একবার যে খাইয়া যায়, সে আবার ঘুরিয়া সেখানেই আসে। রেল-বাজারে তো অতগুলো হোটেল রহিয়াছে—সে আর কোথাও যাইবে না। আজও মাংস রাস্লা রণধিবার ভার তাহারই উপর পডিল । খন্দেররা মাংস খাইয়া খুব তারিফও করিতে লাগিল। কিন্তু আসলে তাহাতে হাজারির ব্যক্তিগত লাভ বিশেষ কিছুই নাই—খঙ্গেরের মুখের প্রশংসা ছাড়া। পদ্ম ঝি তাহাকে একটা উৎসাহের কথাও বলিল না। বেচু চকত্তিও তাই । 哆 অনেক রাত্রে সে খাইতে বসিল । এত ষে ভাল করিয়া নিজের হাতে রান্না মাংস, তাহার নিজের জন্য তখন আর কিছুই নাই । যাহা ছিল, কর্তবাবু নিজের বাসায় পাঠাইয়া দিয়াছেন। তার পরেও সামান্য কিছু যা অবশিষ্ট ছিল, পদ্ম ঝি চাটিয়া-পুটিয়া লইয়া গিয়াছে। খাইবার সময় রোজই এমন মুশকিল ঘটে। তাহার জন্য বিশেষ কিছুই থাকে না, একএকদিন ভাত পৰ্য্যস্ত কম পড়িয়া যায়—মাছ, মাংস তো দূরের কথা । বয়স ছে’চল্লিশ হইলেও হাজারি খাইতে পারে ভাল, খাইতে ভালও বাসে—কিন্তু খাইয়া অধিকাংশ দিনই তার পেট ভরে না । রাত সাড়ে বারোটা । কৰ্ত্তীবাবু হিসাব মিলাইয়া চলিয়া গিয়াছেন। হোটেলে সে আর মতি চাকর ছাড়া আর কেহ রাত্রে থাকে ন! । পদ্ম ঝি অনেকক্ষণ চলিয়া গিয়াছে—রাত দশটার পরে সে থাকে না কোনোদিনই। মতি চাকর বলিল—চলে, ছোট বাজারে যাত্রা হচ্চে, শুনতে যাবে বামুনঠাকুব ? —এত রাত্রে যাত্রা ? পাগল আর কি ! সারাদিন খেটে আবার ও-সব শখ থাকে ? আমি যাবো না–তুই যাস্ তো যা । এসে ভাড়ার ঘরের জানালায় টোকা মারিস। দোর খুলে দেবো । মতি চাকর ছোকরা মানুষ। তাহার শখও বেশী, সে চলিয়া গেল। মতি যাইবার কিছুক্ষণ পরে কে একজন বাহির হইতে দরজা ঠেলিল । হাজারি উঠিয়া গিয়া দরজা খুলিয়া পাশের হোটেলের মালিক খোদ যদু বঁাড় ষোকে দরজার বাহিরে দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল। যছ বাজুয্যের হোটেলের সঙ্গে তাহাদের রেষারেষি করিয়া কারবার চলে। তিনি এত রাত্রে এখানে কি মনে করিয়া ? কখনো তো আসেন না ! হাজারির মন সন্ত্রমে পূর্ণ হইয়া গেল, যদু বাড়য্যেও একটা হোটেলের কর্তা, স্বতরাং হাজারির