পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه(به জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে সহজ বিস্ময়-সৃষ্টি—কতকটা ত’ কবি-স্বলভ, কতকটা শিশুসুলভ, কিন্তু সততায় স্বস্থির , অকৃত্রিম নিসর্গানুভূতি বা প্রকৃতি-প্রীতি, অকুষ্টিত রহস্তান্তভূতি বা অন্তমুখিতঃ এবং সাধারণ জীবনযাত্রার ঐ ও মাধুর্ধ বোধ—এই চার মূল সীমায় বিভূতিভূষণের মূল সাহিত্যপরিচয়কে স্থাপিত করা যায় –অবগু যদি সংকীর্ণ করে কথাটা আমরা গ্রহণ না করি, এবং মনে রাখি, শুধু স্বত্র দিয়ে যে পরিচয় সে পরিচয় কিছুতেই সম্পূর্ণ পরিচয় নয়। স্বত্রের সার্থকতা পাঠকের বিচারবুদ্ধিকে কতকটা অবলম্বন যোগানো । কিন্তু বিভূতিভূষণের স্বকীয়তারণস্বরূপ তাতে বিশেষ ধরা পড়ে ন—তাও কতকটা বোঝা চাই । ৈ যেমন বিভূতিভূষণের নিসর্গপ্রীতির ও রহস্যাহভূতির কথা ধরা যাক, । রহস্তবোধের সে ঐতিহ্ন যে কত স্বৰূরাগত, আচার্য স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অতুলনীয় বিদ্যাবত্তায় তা নির্দেশ করেছেন। তিনি “আরণ্যকে’র স্রষ্টাকে "অরণ্যশ্ৰী’ উপাধিতে বরণ করতে চান ; মোটেই তা অসমীচীন নয়। কিন্তু বিভূতিভূষণ যে সে তুলনাতেই ‘পল্লীশ্ৰী' উপাধিরও অধিকারী পথের পাচালী’ থেকেই তো তাও আমরা উপলব্ধি করেছি। আবার তখন থেকেই স্বম্পষ্ট তারা-ভর আকাশ ও বিচিত্র বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি বিভূতিভূষণের আস্তরিক অনুভূতি। মানবশৈশবের এই সহজ বিস্ময় তার হৃদয়ে যে জেমস জীনস্-এর "মিষ্টিরিয়াস ইউনিভার্স বা আধুনিক প্রাণ-তত্বের গ্রন্থাদি পাঠে, নতুনতর সরসতা অর্জন করেছে, এ কথাও বুঝি। আবার কোনো কোনো দিক থেকে দেখলে মনে হবে বিভূতিভূষণ রবীন্দ্রনাথের ঐতিহের অংশীদার, এবং ওয়ার্ডসওয়ার্থেরও । প্রকৃতি অম্বুরাগের কথায় ওই দু’জন মহারথীর কথা বিশেষ করে এসে পড়ে। কারণ ও দুজনার মতোই বিভূতিভূষণের নিসর্গাহভূতি র্তার রহস্যামুভূতির বা অধ্যাত্মমুখিতার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সেখানেও মিল যতট, পার্থক্য তার অপেক্ষ কম নয়—বিভূতিভূষণের আধ্যাত্মতত্ব যে পরিমাণে পরলোকে বিশ্বাস ও প্রেততত্বের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে, রবীন্দ্রনাথ বা ওয়ার্ডসওয়ার্থের নিকট তাতে তা গ্রাহ হবার কথা নয়। অনেক রহস্তবাদীর দৃষ্টিতেও ওরূপ অতিপ্রাক্কতামুরাগ অপরিণত অধ্যাত্মচেতনারই প্রমাণ । ’ বিভূতিভূষণের এ বোধও যেন মানব-শৈশবের এনিমিষ্টিক বোধেরই সগোত্র। তাই বলে বিভূতিভূষণ সমস্ত স্বষ্টির মধ্যে প্রাণশক্তির যে অপরাজেয় প্রকাশ অনুভব করেন, তা মোটেই বিভ্রান্ত নয়, শিশুচিতও নয়। ভারতীয় বৈদিক ঋষিদের ভাবনায় এই প্ৰাণ-ভাবনারও মূল রয়েছে,—"প্রাণ এব এজতি’ ছিল ধাদের স্বস্থির উপলব্ধি। রবীন্দ্রনাথকে তো এই সত্যের নব-মন্ত্রভ্রষ্টাও বলা চলে। কিন্তু বিভূতিভূষণ পাশ্চাত্ত্য বৈজ্ঞানিক-দার্শনিকদের 'এল ভিতাল বা "লাইফ-ফোর্স' ধারণার সঙ্গেও নিজের আত্মীয়তা স্বীকার করতেন, সে কথাও আমরা জানি। মূল কথাটা এই—এরূপেই বিভূতিভূষণের স্বকীয়তা—জগৎ ও জীবনকে চোখ মেলে দেখা, ও সে দেখার বিশ্বর অন্তমুখিতায় অঙ্কুরঞ্জিত। এই আপন সীমাতেই বিভূতিভূষণের দৃষ্টি সাধক ; তার বেশি সম্পূর্ণভা তাতে প্রত্যাশা করা বৃথা ।