পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 8 বিভূতি-রচনাবলী হঠাৎ একদিন পথে দু’জনের দেখা । —জ্যাঠামশায় যে ! দাড়ান একটু পায়ের ধুলো দিন। আপনি এখানে কোথায় ? —আরে কুস্কম, কোথেকে তুই এখানে ? –এই তো আমার শ্বশুরবাড়ী, ছোট বাজারে মন্দিরের গায়েই। আপনি কি আজ বাড়ী থেকে এসেছেন ? —না রে—আমি রেল-বাজারে হোটেলে কাজ করি। আজ মাস ছ’-সাত আছি। বিদেশে একই গ্রামের মাহুষ দেখিয়া দু’জনেই খুব খুশী হইল। সেই হইতে কুস্কম হাজারি ঠাকুরের হোটেলে দুধ দই বেচিতে গিয়াছে। গরীব বলিয়া হাজারি ঠাকুর অনেকবার লুকাইয়া হোটেল হইতে রাধা ভাত-তরকারি তাহাকে থালা করিয়া বাড়িয়া দিয়াছে। দুধ দুই বেচিয়া ফিরিবার সময় কুতুদের পাটের আড়তের গলিটায় দাড়াইয়। কুষম থালা লইয়া গিয়াছে। ইহাদের মেলামেশা ও ঘনিষ্ঠতা পদ্ম ঝির চোখ এড়ায় নাই, স্বতরাং সে বলিতেই পারে। দুপুরের পর হাজারি প্রতিদিনের মত চুণীর ধারে যাইতেছে—এমন সময় কুস্কমের সঙ্গে দেখা হইল । কুসুম দুধের ভাড় হাতে ঝুলাইয়া বাড়ী ফিরিতেছিল। তাহার বয়স চব্বিশ-পচিশ, বেশ স্বাস্থ্য, রং হামবর্ণ, মুখশ্ৰী বেশ শাস্ত । হাজারি বলিল—বাড়ী ফিরছিস এত বেলায় ষে । কুসুম বলিল—জ্যাঠামশায়, বড় দেরি হয়ে গেল। নিজের তো দুধ নেই—কায়েত পড়ি৷ থেকে দুধ আনি, তবে বিক্ৰী করি, তবে বাড়ী ফিরি। আম্বন না আমাদের বাড়ী । —না, এখন আর কোথায় যাবো! তুই যা, খাবি-দাবি । কুস্বম কিছুতেই ছাড়ে না, বলিল—আমার খাওয়া-দাওয়া জ্যাঠামশায়, শাশুড়ী রোধে রেখে fদয়েচে গিয়ে থাবো ; কতক্ষণ লাগবে ? অম্বিন না। হাজারি অগত্যা গেল। ছ’চালা একখানা বড় ঘর, সেখানেতে কুম্বমের শাশুড়ী থাকে— আর একখান ছোট চারচালা ঘরে কুষম ছেলে দুটি লইয়া থাকে। শাশুড়ীর সহিত কুম্বমের খুব সম্ভাব নাই। কুসুম নিজের ঘরে হাজারিকে লইয়া গিয়া বসাইল। ঘরের মধ্যে একখানা তক্তপোশ, পুরু কাথ৷ পাতিয়া স্বন্দর পরিপাটি বিছান। তাহার উপরে ৷ তক্তপোশের নীচে বালি দেওয়া অার-বছরের আলু। এককোণে কতকগুলি ইড়িকুড়ি ও একটা বড় জালা—বাশের আল্লাতে কতকগুলি লেপ-কাথা বাধা । একটা জলচৌকিতে খানকতক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকৃঝকে পিতল কাসার বাসন । ধর দেখিয়া হাজারির মনে হইল—কুষম বেশ সাজাইয়া রাখিতে জানে জিনিসপত্র। কুষম বলিল—পান খাবেল জ্যাঠামশায় ?