পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু-হোটেল ২৯ রাত সাড়ে তিনটার সময় গাংনাপুর স্টেশনে নামিয়া হাজারি নিজের গ্রামের পথ ধরিল এবং সাড়ে তিন ক্রোশ পথ হাটিয়া ভোর হইবার সঙ্গে সঙ্গে স্বগ্রামে পৌছিল। এড়োশোলা এক সময়ে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল—এখন পূর্বের শ্ৰী নাই। গ্রামের জমিদার কর বাবুরা এখান হইতে উঠিয়া কলিকাতা চলিয়া ষাওয়াতে গ্রামের মাইনর স্কুলটির অবস্থা খারাপ হইয়া পড়িয়াছে। বড় দীঘিটা মজিয়া গিয়াছে, ভদ্রলোকের মধ্যে অনেকে এখান হইতে বাস উঠাইয়া কেহ রানাঘাট, কেহ কলিকাতা চলিয়া গিয়াছেন। নিতান্ত নিরুপায় যারা তারাই গ্রামে পড়িয়া আছে। হাজারির বাড়ীতে ছুখানা খড়ের ঘর। ছোট্ট উঠান, একদিকে কাঠাল গাছ, অন্যদিকে একটা সজনে গাছ এবং একটা পেয়ার গাছ। এই পেয়ারা গাছটা হাজারির মা নিজের হাতে পুতিয়াছিলেন—বেশ বড় বড় পেয়ারা হয়, কাশীর পেয়ারার বীজের চারা । হাজারির ডাকাডাকিতে হাজারির স্ত্রী উঠিয়া দোর খুলিয়া, এ অবস্থায় স্বামীকে দেখিয়া বলিল—এসে, এসো। শেষ রাতের গাড়ীতে এলে কেন গো । এই দূরাস্তর রাস্ত, অন্ধকার রাত—আবার বডড সাপের ভয় হয়েছে—সাপের কামড়ে দু-তিনটি মাস্থ্য মরে গিয়েছে এর মধ্যে । —আমাদের গায়ে ? —আমাদের গায়ে নয়—নতুন কাওয়া পাড়ায় একটা মরেচে আর বামন পাড়ায় শুনচি একটা—অত বড় বেঁাচকাতে কি গো ? হাজারি লুচির আসল ইতিহাস কিছু বলিল না। স্ত্রীর আনন্দপূর্ণ সাগ্রহ প্রশ্নের উত্তরে সে কেবল বলিল—পেয়েছি গো পেয়েছি। ভগবান দিয়েছেন, সবাই মিলে থেয়ে নাও মজা ক’রে । টেপিকে খুব ক’রে খাওয়াও, ও পেট ভরে থাবে আমি দেখি । সেদিন সকালের গাড়ীতে হাজারি রাণাঘাটে ফিরিতে পারিল না। দুপুরের পরে হাজারি কুস্কমের বাপের বাড়ী বেড়াইতে গেল। এই গ্রামেই গোয়ালাপাড়ায় কুম্বমের জ্যাঠামশায় হরি ঘোষের অবস্থা এক সময় যথেষ্ট ভাল ছিল, এখনও বাড়ীতে গোহাল-পোরা গরুর মধ্যে আট-দশটি অবশিষ্ট আছে, দুটি ছোট ছোট ধানের গোলাও বজায় আছে। 鹽 হাজারিকে হরি ঘোষ খুব খাতির করিয়া খেজুর পাতার চটে বলিতে দিল । বলিল—কৰে আলেন বাবাঠাকুর ? সব ভালো । —তোমরা সব ভাল আছ ? —আপনার ছিচরণের আশিববাদে এক রকম চলে যাচ্ছে। রাণাঘাটেই কাজ কচ্চেন তো ?