পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী জঙ্গলের ঝোপ, আঁচোড় বাসক ফুলের গাছ নিবিড় হইয়া উঠিয়া মাছুষের উগ্র লোলুপতার লজ্জা খামল শান্তি ও বনকুসুমের গদ্ধে ঢাকিয়া দিয়াছে। চীনা পৰ্য্যটক আই সিং যেমন বলিয়াছেন—মন ও অন্তঃকরণের তৃষ্ণ হইতে দুঃখ আসে, পুনর্জন্ম আসে। কিন্তু তৃষ্ণ দূর কর, লোভকে ঢাকিয়া মনে শাস্তি স্থাপন কর—শ্ৰমসমূত্রে মানবাত্মার পরিভ্রমণ শেষ হইবে। ন, কী যেন ভাবিতেছিলেন—তারাজোল গ্রামের তালদীঘির কথা। মনের মধ্যে উলটপালটা ভাবনা আসিতেছে। পয়তাল্লিশ বৎসর পূর্বের সেই হুগলী জেলার অন্তঃপাতী ক্ষুদ্র গ্রামখানি আজ আবার স্পষ্ট হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে, মূখুজেবাড়ীর ছেলে ছুম্ব ছিল সঙ্গী, ছুহুর সঙ্গে বঁাশতলায় বঁাশের শুকুম খোলা কুড়াইয়া আনিয়া নৌকা করিতেন। একবার তেঁতুলগাছে উঠিয়া তেঁতুল পাড়িতে গিয়া হাত ভাঙিয়াছিলেন, সাত ক্রোশ হাটিয়া দামোদরের বন্যা দেখিতে গিয়া পথে এক গ্রামে কামারবাড়ী রাত্রে তিনি ও র্তাহার দুইজন বালক সঙ্গী চিড়া-দুধ খাইয় তাহাদের দাওয়ায় গুইয়া ছিলেন–যেন কালিকার কথা বলিয়া মনে হইতেছে। কতকাল তারাজোল যাওয়া হয় নাই ! কেহ নাই আপনার লোক সে গ্রামে। বহুদিন আগে পৈতৃক বাড়ী ভাঙিয়া চুরিয়া লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। আজ প্রায় ত্রিশ বৎসর আগে তিন দিনের জন্য তারাজোল গিয়া প্রতিবেশীর বাড়ী কাটাইয়া আসিয়াছিলেন, আর যান নাই। তখনই বাল্যদিনের সে বাড়ীম্বর জঙ্গলাবৃত ইষ্টকস্থূপে পরিণত হইয়াছে দেখিয়াছিলেন—ধ্য, প্রায় ত্রিশ বৎসর হইবে। নারাণবাবু মনে মনে হিসাব করিয়া দেখিবার চেষ্টা করিলেন। জ্যোতিবিনোদ ও যদুবাবু একসঙ্গে ঘরে ঢুকিলেন । যদুবাৰু বলিলেন, কেমন আছেন দাদা ? এই দুটে৷ কমলালেবু-ওহে জ্যোতিৰ্ব্বিনোদ, দণ ও না রস ক’রে। ঐশবাবু উকি মারিয়া বলিলেন, কে ঘরে বসে ? যদুবাবু বলিলেন, এই আমুরাই আছি। এস ঐশ ভায়া। —দাদা কেমন ? —এই একটু কমলালেবুর রস খাওয়াচ্ছি। নারাণবাবুর তৃষিত দৃষ্টি দোরের দিকে চাহিয়া থাকে। দুই দিন, তিন দিন, কোন দিনই চুনিকে দেখতে পান নাম চুনি আসে না কেন ? বোধ হয় সে শোনে নাই তাহার অমুখের কথা । - সকলে চলিয়া যায়। গভীর রাত্রি । টিমটিম করিয়া আলো জলিতেছে । উত্তর মাঠে গ্রামের বাশবনের ওপারে দুইটি লোক আকৰ্ম্ম গাছের পাকা ও ফাট ফল সংগ্ৰহ করিয়৷ বেড়াইতেছে—তুলা বাহির করিয়া খেলা করিবে। তিনি জার ছুছ। প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পূর্বের তারাজোল গ্রাম। ছয় বাচিয়া নাই—প্রায় পচিশ বৎসর পূৰ্ব্বে মারা গিয়াছে "**