পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ২১১ ফর্স চেহারা, মাথার চুল ধবধৰে সাদা, মুখশ্ৰীতে একটা সদানন, উদার অথচ একটু ধেন নিৰ্ব্বোধের ভাব। তাতে মানুষকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে তার দিকে। আমি নিজে তো ধূৰ্ত্ত মানুষের চেয়ে নিৰ্ব্বোধ লোক ঢের বেশি পছন্দ করি। আমায় বল্পেন—আমার বডড আনন্দ হচে আপনি আজ এসেচেন আমার বাড়ী—বিয়ে হোক না হোক, সে ভবিতব্য । কিন্তু আপনার আসাতেই— গ্রামের দু'তিনটি ভদ্রলোক, কেউ কেঁাচার টিক গায়ে, কেউ একটা আধময়লা পাঞ্জাবি গায়ে, এসে বৈঠকখানায় ঢুকে আমাদের দিকে চেয়ে নমস্কার করে বসলেন অন্যদিকে। রায় মশায় বল্পেন—ওদিকে কেন, সরে আনুন, সরে আস্বন—এই ইনিই রামলাল বাৰু—আলাপ পরিচয় করুন— কিন্তু তার নিতান্ত গ্রাম্য লোক, আমার সঙ্গে আলাপ পরিচয় করতে তাদৃশ সাহস করলেন না বোধ হয়। একটু পরে তাদের একজন নিজেই তামাক সেঙ্গে টানতে লাগলেন। ভট চজি মশায়ও তামাক খাবেন বলে ওদিকে উঠে গেলেন। আমি আর রমেশ এদিকে বসে রইলাম। সীতানাথ রায় মশায় একটু পরে বাড়ীর ভেতর থেকে এসে বল্পেন—চলুন, একটু মিষ্টিমুখ করবেন।—অজ পাড়াগায়ে এইটিই বলা রীতি। একটু শহর-ঘেষা জায়গা হ’লে বলতে চলুন, চা খাবেন। বৈঠকখানা ছাড়িয়ে খুব বড় একটা হলঘর পার হয়ে ডাইনে বায়ে দু’দিকেই বারান্দাওয়ালা কুঠুরির সারি। অনেকগুলি কুঠুরি, আট-দশটার কম নয়, তারপর আবার খোলা রোয়াক, পূব পশ্চিমে লম্ব। তারপর চাতাল বাধানে উঠান পার হয়ে ওদিকের আর একট। বড় টানা ঢাকা বারান্দায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হ’ল । আমি চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলুম। প্রাচীন জমিদার-বাট বটে। ভেতরটা আগাগোড়ী চকমেলানো, খুব উচু কানিশযুক্ত ছাদ- তবে সেকেলে বাড়ী, ছোট ছোট দরজা জানাল। বারান্দায় আট দশজন লোকের প্রচুর জলযোগের আয়োজম সজ্জিত ছিল। সীতানাথ রায় মহাশয়ের প্রৌঢ়ী গৃহিণী সকলকে লুচি পরিবেষণ করলেন—কারণ এখানে বাইরের লোকের মধ্যে এক যা আমিই আছি, আর সবাই এই গ্রামেরই লোক । আমার মনে হ’ল তিনি লুচি পরিবেষণের ছলে আমায় দেখতে এসেচেন এবং বেশ একটু আগ্রহের সঙ্গেই আমার দিকে চেয়ে চেয়ে বার বার দেখচেন । জলযোগাস্তে রায়-মশায় আমায় পাশের ঘরে নিয়ে, গিয়ে ওঁর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। আমি পায়ের ধূলো নিয়ে প্রণাম করতেই তিনি বল্পেন—এসো বাবা এসো— মনে হ’ল ঠিক যেন নিজের মা। আমায় আর একটি বর্ষীয়সী মহিলার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন গৃহিণী নিজে । বল্পেন —বড় কুলীন বংশ, যদি এখন আমার মেয়ের শিবপুজোর জোর থাকে—তোমরা পাঁচজনে আশীৰ্ব্বাদ করো— o এর। আমার সঙ্গে যে অমায়িক, হৃদ্যতাপূর্ণ ব্যবহার করলেন, শুধু এই সব পল্লীগ্রামেই তার