পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ>br বিভূতি-রচনাবলী নিস্তারিণী অবাক হয়ে মুখ তুলে চাইলে । বাড়ুৰ্য্যেবাড়ীর মেয়েরা কখনো তাদের বাড়ীর বেড়ার ধারে দাড়িয়ে কথা বলে না । সে বল্পে—কি দিদিমণি ? —একটা কথা বলবো । —কি বলে দিদিমণি— —আমাদের আজ একদম চাল নেই ঘরে । বাদলায় শুকুচ্চে না, কাল ধান ভেজে দুটো চি ড়ে হয়েছিল। তোমাদের ঘরে চাল আছে, কাঠাখানেক দেবে ? নিস্তারিণী এদিক ওদিক চেয়ে দেখলে, তার খাণ্ডার শাশুড়ী কোনোদিকে আছে কি না । পরে বল্লে—দাড়াও দিদিমণি—দেবানি চাল ঘরে আছে। শাশুড়ীকে লুকিয়ে দিতি হবে— দেখতি পেলে বড় বকবে আমারে। তা বকুক গে, তা ব’লে বামুনের মেয়েকে বাড়ী থেকে ফিরিয়ে দেবো ? আর একবার বাড়ুৰ্য্যেবাড়ীর বেী তার বৃদ্ধ শাশুড়ীকে ঝগড়া করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ; সে বেী ছিল গ্রামের মধ্যে নামডাকওয়ালা খাণ্ডার বেী –শাশুড়ীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া বাধাতে, কেরোসিনের টেমি ধরিয়ে শাশুড়ীর মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল। পাড়ার কেউ ভয়ে বৃদ্ধাকে স্থান দিতে পারে নি, যে আশ্রয় দেবে তাকেই বড় বৌয়ের গালাগালি খেতে হবে। যুগী-বোঁ দেখলে বাড়য্যেবাড়ীর বেড়ার কাছে বড় সেগুনতলার ছায়ায় নঠাকরুণ চুপ ক'রে দাড়িয়ে হাপুম নয়নে কাদচেন। গিয়ে বল্লে—মঠাকরুণ, আস্থন আমাদের বাড়ীর দাওয়াতে বসবেন—বড় বেী বকেছে বুঝি ? নষ্ঠাকরুণ শুচিবেয়ে মানুষ, তা ছাড়া বাড়ুৰ্য্যেবাড়ীর গিন্নী হয়ে যুগী বাড়ী আশ্রয় নিলে মান থাকে না। স্বতরাং প্রথমে তিনি বল্পেন—না বেী, তুমি যাও, আমার কপালে এ যখন চিরদিনের, তখন তুমি একদিন বাড়িতে ঠাই দিয়ে আমার কি করবে ? নগের বে। যেদিন চটকাতলায় চিতেয় শোবে, সেদিনটি ছাড়া আমার শাস্তি হবে না মা। ওই ‘কালনাগিনী’ যেদিন আমার নগের ঘাড়ে চেপেচে— নিস্তারিণী ভয়ে ভয়ে বন্ধুে—চুপ করুন ন'গিনী, বৌ শুনতি পেলি আমার এস্তক রক্ষে রাখবে না। আমুন আপনি আমার বাড়ীতে। এইখানে দাড়িয়ে কষ্ট পাবেন কেন মিথ্যে— ন'গিনীকে বাড়ী নিয়ে গিয়ে সে নিজের হাতে তার পা ধুয়ে দিয়ে পিড়ি পেতে দাওয়ায় বসালে। কিছু খেতে দেওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও সে বুঝলে বড় ঘরের গিনী ন’ঠাকরুণ এ বাড়ীতে কোনো কিছু খাবে না, খেতে বলাও ঠিক হবে না। সে ভাগ্য সে করে নি । অনেক রাত্রে গিল্লির বড় ছেলে নগেন খুঁজতে খুঁজতে এসে যখন মায়ের হাত ধরে নিয়ে গেল, তখন নিস্তারিণী অনেক অকুনয় বিনয় ক'রে বড় একছড়া মৰ্ত্তমান কলা তাকে দিয়ে বলে –নিয়ে স্থান দয়া করে। আর তো কিছু নেই, কলাবাগান আছে, কলা ছাড়া মানুষকে হাতে ক’রে আর কিছু নিতে পারিনে—