পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 বিভূতি-রচনাবলী । কত কাল আগে চলে গিয়েচে, তারা যেন এসে দিনরাত ওর বিছানার চারিপাশে ওকে ঘিরে ভিড় করচে। বহুদিন পূর্বের শরৎ-অপরাহের মত হাট থেকে ফিরে ওর স্বামী যেন হাসিমুখে বলচে–ও বড়বে, কলা বিক্রির দরুণ টাকাগুলো এই নাও, তুলে রেখে দাও--আর এই ইলিশ মাছটা—ভারি সন্তা আজ হাটে— ওর সব দুঃখ, সব অপমান, অনাদরের দিনের হঠাৎ আজ এমন অপ্রত্যাশিত অবসান হ’ল কিভাবে ? নিস্তারিণী অবাক হয়ে যায়, বুঝতে পারে না কোনটা স্বপ্ন—কোনটা সত্য। লে একগাল হেসে স্বামীর হাত থেকে ইলিশ মাছুটা নেবার জন্যে হাত বাড়ায় । নিৰ্ম্মল৷ চোখ মুছতে মুছতে বল্লে—সতী নক্ষ্মী সগ গে চলে গেল—বেীমা পায়ের ধূলো নে – তারপর সে নিজেও ঝুকে পড়ে মাতৃসমা বড় জায়ের পায়ে হাত ঠেকায়। গায়ে হলুদ প্রাবণ মাসের দিন, বর্ষার বিরাম নেই, এই বৃষ্টি আসছে এই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচে। ক্ষেতে আউস ধানের গোছা কালো হয়ে উঠেচে, ধানের শিষ দেখা দিয়েচে অধি কাংশ ক্ষেতে | পুটি সকালে উঠে একবারে চারিদিকে চেয়ে দেখলে—চারিদিক মেঘে মেঘাচ্ছন্ন। হয়তে। বা একটু পরে টিপ-টিপ বিটি পড়তে শুরু ক'রে দেবে। আজ তার মনে একটা অদ্ভুত ধরণের অহুভূতি, সেটাকে আনন্দও বলা যেতে পারে, ছদ্মবেশী বিষাদও বলা যায়। কি যে সেটা ঠিক ক’রে না যায় বোঝা, না যায় বোঝানো। আজ তার বিয়ের গায়ে-হলুদের দিন । এমন একটা দিন তার বারো বৎসরের ক্ষুদ্র জীবনে এইবার এই প্রথম এল । সকালে উঠতেই জ্যোঠমা বলেচে—ও পুটি, জলে ভিজে ভিজে কোথাও যেন যাস নি ; আর তিনটে দিন কোনও রকমে ভালোয় ভালোয় কেটে গেলে যে বাচি । আজ কি বার –মঙ্গলবার । শনিবার বুঝি বিয়ের দিন । পুটির মনে সত্যিই কেমন হয়, আনন্দের একটা ঢেউ যেন গলা পৰ্য্যস্ত উঠে আটকে গেল। বিয়ে বেশি দূরে কোথাও নয়, এই গ্রামেই, এমন কি এই পাড়াতেই। এক ঘর ব্রাহ্মণ আজ বছরখানেক হ’ল অন্য জায়গা থেকে উঠে এসেচেন এখানে, দুখানা বড় বড় মেটে ঘর বেঁধেচেন—একখানা রান্নাম্বর। এতদিন ধ’রে সে সঙ্গিনীদের সঙ্গে সেই বাড়ীতে কুল পাড়তে গিয়েচে, সত্যনারাণের সিরি আনতে গিয়েচে, যখন পাড়ার প্রাস্তের ঘন জঙ্গল কেটে সে ভদ্রলোক বাড়ী তৈরি করেন দ্বাটে এাবার পথের একেবারে ডান ধারে, তখন সে কতবার ভেবেচে এই ঘন বনের মধ্যে বাড়ী ক’রে বাস করবার কার না জানি মাথাব্যথা পড়ল । কে জানত, সেই বাড়ীটাই—জাজ একবছর এখনও পোরেনি—তার শ্বশুরবাড়ী হবে।