পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨&ર বিভূতি-রচনাবলী রহস্যময় হয়ে উঠেচে-কোনো শব্দ নেই কোনো দিকে । ঠাকুরদাদা যথেষ্ট দুঃসাহসী হ’লেও র্তার যেন গা ছমছম করে উঠলো—জ্যোৎস্নার সে ছন্নছাড়া অপার্থিব রূপে । তিনি চামড়ার বোতল বের করে কিছু আরিক সেবন করলেন। হঠাৎ হ্রদের তীরের পশ্চিমাংশে চেয়েদেখের্তারমন আনন্দেদুলে উঠলো। জ্যোৎস্নালোকেও আকাশের নীচে একদল বালি-ইাস নামচে। জ্যোৎস্না পড়ে তাদের সাদা দুধের মতপাখাগুলো কি অদ্ভুত দেখাচ্চে ! দেখতে দেখতে তারা নেমে এসে হ্রদের ধারে বালির চরে বসলো। জায়গাটা ঠাকুরদাদার ঝুপড়ি থেকে দু’শো গজের মধ্যে কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি। এতদূর থেকে বন্দুকের পাল্লা পাবে না, বিশেষ এই জ্যোৎস্নারাত্রে। ঠাকুরদাদা ভাবলেন, দেখি ওরা কাছে আসে কিনা, বা আরও হাসের দল নামে কিনা। শিকারীর পক্ষে ধৈৰ্য্যের মত গুণ আর কিছু নেই। একদৃষ্টে হাসগুলোকে লক্ষ্য করাই ভালো। কিন্তু পরক্ষণেই ঠাকুরদাদা বিস্ময়ে নিজের চোখ বার বার মূছলেন। আরক খেয়েচেন বটে, কিন্তু তাতে জ্ঞানহারী হবার বা চোথে অত ভুল দেখবার কি কারণ অাছে এখনই ? অতঃপর যা ঘটল তা বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছা মিষ্টার ব্যানাজি, কিন্তু এ গল্প আমি বাবার মুখে অনেকবার শুনেচি—আমাদের বংশের ঘটনা—কাজেই আমি আপনাকে মিথ্যে বলচি বানিয়ে, অন্তত এইটুকু ভাববেন না । ঠাকুরদাদা দেখলেন, সেই হাসগুলে। সাধারণ স্থাসের মত নয়—অনেক বড়। অনেক--অনেক বড় । হাসের মত তাদের চালচলন ময়। তার পরেই মনে হ’ল সেগুলো হাসই নয় আদপে । সেগুলো মানুষের মত চেহারা বিশিষ্ট। বেচারী ঠাকুরদাদা আবার চোখ মুছলেন। আরক ঐটুকু খেয়েই আজ আবার এ কি দশ। পরক্ষণেই সেই জীবগুলি জলে নামল এবং হাসের মত সাতার দিয়ে, তিনি যেখানে লুকিয়ে আছেন, তার কাছাকাছি জলে এসে গেল। কৃষ্ণা দ্বিতীয়ার পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নাতে বিম্মিত, ভীত চকিত, দুঃসাহসী, আরক-সেবনকারী ঠাকুরদাদা দেখলেন, তারা সত্যিই হাস নয়—একদল অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে ! শুভ্র তাদের বেশ—জ্যোৎস্না পড়ে চিকুচিক্‌ করচে । তাদের হাসি, মুখশ্ৰী সবই অতি অদ্ভূত ধরণের স্বন্দর। কতক্ষণ ধরে তার নিজেদের মধ্যে খেলা করলে জলে, রাজহংসের মত কুঠাম ধরণে, নিঃশবে, সুন্দর ভঙ্গিতে হ্রদের বুকে সাতার দিতে লাগলো। তারপর কতক্ষণ পরে—ত ঠাকুরদাদার আন্দাজ ছিল না—কারণ, তখন ঠাকুরদাদা সময়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেচেন—ওরা সবাই জল থেকে উঠলে এবং অল্পপরেই জ্যোৎস্নাভয়া আকাশ দিয়ে ভেসে হাসের মতই শুভ্ৰ পাখা নেড়ে অদৃপ্ত হয়ে গেল। —ইদের তীরের বাতাস তখনও তাদের অপূৰ্ব্ব দেহগন্ধে ভরপুর। আমার ঠাকুরদাদা নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলেন তিনি জেগে আছেন কিনা। তখন র্তার আরকের নেশা ছুটে গিয়েচে । একটু পরে রাত ফসর্ণ হয়ে জ্যোৎস্না মিলিয়ে গেল। তিনি উল্লান্ত মস্তিষ্কে হ্রদের পার থেকে হেঁটে চলে এলেন পাহাড়ের কোলে । সেখান থেকে পৌছলেন ভীলদের গ্রামে। → বৃদ্ধ ভাল ভৈজি তাকে বল্পে—হুজুর, হাস নেমেছিল কাল ?