পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত २¢¢ হন্তেঙ্গিতে প্রদশিত ঘরের কড়িকাঠের শূন্যতার দিকে চেয়ে রইল । আভা বয়ে—আবার আমরা এক জায়গায় যাচ্চি যে খুকু, কত কি দেখচি, তুই খাবার খাচ্চিস। ছবি, বাজনা কত কি হচ্চে—গাড়ী চড়ব তুই আর আমি—বুঝলি খুকি, বুঝলি ? অবিনাশ বাজার করে এনে ছোট পায়রার খোপের মত রান্নাঘরটার সামনে নামালো । আভ গামছা খুলে বল্লে—মাছ আননি ? —তেমন মাছ পেলাম না, আবার ওবেলাকার ধরে রিকৃশাভাড়া রয়েচে—কতকগুলো পয়সা— —থাকৃ গে তবে । তুমি তাহলে কবিরাজের বাড়ী থেকে চট্‌ করে সেরে এস —বেশী দেরি হয় না যেন । খেতেদেতে ওদিকে আবার— —যথেষ্ট সময় থাকবে, ভাবনা কি ? এই তো য়্যালবার্ট হল, কতটুকুই বা রাস্তা। যেতে ধরে কুড়ি মিনিট রিকৃশাতে—গোলদীঘি দেখ নি ? সেই সেবার কালীঘাট থেকে আসতে দেখালাম, রেলিং দিয়ে ঘেরা একটা পুকুর, কত লোক বেড়াচ্চে, মনে নেই ? ওরই কাছে। অবিনাশ চলে গেল । আভা ছুটোছুটি করে রান্না চড়িয়ে দিল “মনে আজ তার ভারি আনন্দ ! কতদিন সে কোথাও বেড়ায় নি, সেই পৌষ মাসে কালীঘাট গিয়েছিল, আর এটা আশ্বিন মাসের প্রথম । •••কোন কিছু দেখা, বা কোথাও যাওয়া তো ঘটেই ওঠে না । লোকে বলে কলকাতা শহরে কত দেখবার জিনিস, কি-ই বা দেখলো সে কলকাতায় এসে ? এসেচে তো আজ ছ’বছরের ওপর হ’ল । আর কি করেই বা হবে ? খুকীর বাবা একটা কাগজের দোকানে কাজ করে, মাসে ত্রিশটি টাকা মাইনে পায় । ওর মধ্যে দুধ, ওর মধ্যে ঘরভাড়া, ওর মধ্যে কাপড়চোপড়। মাসের শেষে এক একদিন বাজার হয় না, তা বেড়ানো আর থিয়েটার বায়োস্কোপ দেখা ! মুদী ধারে চাল ডাল দেয়, তাই রক্ষে । ধার চারিদিকে কয়লাওয়ালা, কেরোসিন তেলওয়ালা, ধোপা, মুদী, বাড়ীভাড়া । তবুও তো ঠিকে বিটাকে ওমাস থেকে জবাব দেওয়া হয়েচে; আভা নিজেই সব কাজ করে। খুকী এখন বড় হয়েচে, মাসে দেড়টাকা ঝিয়ের পেছনে দেওয়ার চেয়ে ওই দেড় টাকায় খুকীর আর খুকীর বাপের বিকেলের জলখাবারটা তো হয়ে যায় ? 態 পরশু অবিনাশ এসে একখানা,রাঙা কার্ড আভার হাতে দিয়ে বলেছিল, টিকিটখানা ভালো করে রেখে দাও তো আভা । আভা বল্পে—এ কিসের টিকিট গো ? —ও, আমাদের এসোসিয়েশনের বাৰ্ষিক উৎসব কিনা রবিবার। য়্যালবার্ট হল ভাড়া নিয়েচে । তাই একখানা টিকিট দিয়েচে । —কি হবে সেখানে ? —কনসার্ট হবে, গান হবে । তার পরে খাওয়াদাওয়া আছে ।