পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

stov * বিভূতি-রচনাবলী গুরু ট্রেনিং পাশ করেচে। বড় চমৎকার লাগলো জাজ ঐ ঘেটুফুলের শোত । দুঃখের বিষয় কেউ এ সব দেখতে আসে না । আজ অপরাত্ত্বে ছিরেপুকুরের ওপারে আমবাগানের তলায় ঘেটুফুলের ঘন বনের মধ্যে কতক্ষণ থলে রইলুম। এমন ফাত্তন দিনে এমন ঘেটুফুলের সমারোহের মাঝখানে জীবন কোনদিন কাটাইনি। চিরকালই বিদেশে কাটিয়ে এসেচি। হয় ভাগলপুরে নর কলকাতায়, কিংবা মানভূমে, ঘাটশিলায়, ঝাড়গ্রামে। আজ বলে আছি, ঘেটুফুলের বনের মধ্যে, ফুলের ঘন সবাসের মধ্যে। ফুলে ভৰ্ত্তি ঘেটুবন আমার চারপাশে ঘিরে, লতাপাতার স্বগন্ধ, সামনে গাছে তিক্তিরাজের আধফাট ফলের খোলো ঝুলচে, কোকিল ডাকচে । ধন্ত হোক ভগবানের নাম । ধন্য হোক সেই মহাশিল্পীর শিল্পম্বাই । ক'দিন ধরে গণি ও সয়ারামের মোকৰ্দমার বিচার করচি পল্লীমঙ্গল সমিতির অধিবেশনে । কাল রাত্রেও চড়কতলায় অধিবেশন হয়ে গেল। এ গ্রামের ঝগড়াবিবাদ মিটবে না। যত চেষ্টা করি বিবাদ থামাতে, তত আরো বেড়ে যায়। কাল বিকেলে কুঠার বাধানো গাথুনিতে কতক্ষণ বসে রইলুম—সব শুকনো লতা, পাত, কাঠ, ডাল, তুতফল ইত্যাদির গন্ধ বেরোয় এ সময় । ভারি আরামের গন্ধটা। এ পারের মাঠে কতক্ষণ বলে একটা মূৰ্ত্তি কল্পনা করবার চেষ্টা করলুম নির্জনে। সমিতির অধিবেশনের পূৰ্ব্বে গিরীনদার বাড়ী এসে দেবপ্রয়াগের কথা হয়। সে শুধু খাবার জিনিসের গল্প। খোয়ার লাড বানিয়ে কি ভাবে উনি পাওদের খাইয়েছিলেন —সে গল্প। উনি বল্পেন—আবার চলে তুমি আমি বেরুই। আমি হবো স্বামীজী, তুমি প্রধান শিষ্য। ইদুর বাড়ীতে ইন্দু স্ববর্ণপুরের দাম্ববাবুর গল্প করলে। দাম্ববাবু বলতো—আর কি খাই আজকাল ? একটি রুই মাছের মুড়ে ও গাওয়া ঘি রোজ খাদ্য ছিল—ইত্যাদি। চড়কতলায় খুব মিটিং। মূৰুরি ডালের ক্ষেতে কতটা মুম্বরি খেয়েচে, তাই নিয়ে ঘোর তর্ক। সয়ারাম বলে— আড়াই মন মুম্রি হবে । ঘোর বিবাদ । গভীর রাত্রে খুব ঝড়বৃষ্টি । কল্যাণী বলচে, ওগো, জানালী বন্ধ করো, ভেঙে যাবে যে ! ঘুমের ঘোরে ভয়ে বলচে । কাল খুব বাড়বৃষ্টি বিকেলে । রাধাবল্পভের জামাই কেষ্টর বাড়ী সন্ধ্যার পরে উপনিষদ ও গীতার ব্যাখ্যা হোল। অনেক লোক শুনতে এলেছিল, সতীশ ঘোষ, মতি দা'র ছেলে যুগল, ললিত, লালমোছন, ক্ষণিকাক, গজেন, ফকিরর্চাদ ইত্যাদি । শাস্তিপুরের এক অদ্বৈত বংশের গোস্বামী মশায়ও উপস্থিত ছিলেন। লালমোহনের বাড়ীর পিছনের যে পথটা দিয়ে আমি সকালে গেলাম সে পথে জীবনে কখনো যাইনি—নতুন দেখলাম। বারাকপুরেও এমন সব জায়গা জুছলে আছে যা আমি জীবনেও কখনো দেখিনি। রাত এগারোটার সময় ফিরে এলুম। অনেক রাত্রে ভীষণ মেঘ গর্জন, তার সঙ্গে