পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

838 বিভূতি-রচনাবলী স্বধীরবাবুর বাড়ীতে খেয়ে ফিরবার পথে রাসবিহারীবাবু সাইডিং-এ ফোন করলেন স্টেশন থেকে। পরদিন সকালে ট্রেন ছাড়বে, তাতে একটা সেলুম জুড়ে দিতে বলে দিলেন । সকালে গাড়ীতে চড়বার সময় সেলুন’ এর অবস্থা দেখে আমার চক্ষুস্থির। একখানা মালগাড়ী, যাকে বলে covered wagon, তবে দুখান৷ কাঠের বেঞ্চি পাতা আছে তার মধ্যে এই যা । পাচ মাইল গিয়েই ছোট গাড়ী নিবিড় অরণ্যের মধ্যে প্রবেশ করলো। আমি বড় ভালবাসি সারেণ্ডার এই অপরূপ নিজনতা। এত বড় বড় শাল ও আসান গাছও সিংডুমের অন্য অঞ্চলে দেখা যায় না । মোটা মোটা কাছির মত লতা এ গাছ থেকে ৪ গাছে জড়াজড়ি করে রয়েছে। বড় বড় কুরচি ফুলের গাছ। । এত বড় কুরচি গাছ আমি তো কোথাও দেখিনি । বন্ত শণের বড় বড় হলদে ফুল রেললাইনের দুধারে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে ফুটে আছে। বা দিকে একটা পাহাড়ের সারি, হঠাৎ পাহাড়শ্রেণীর ফাক দিয়ে কখন পাৰ্ব্বত্য নদী কোয়েল এসে মিশলো রেললাইনের পাশে । দুই তট শিলাস্তৃত, মাঝে মাঝে সাদা লিলির সঙ্গে মিশেছে হলুদ রং এর বন্ত শণের ( wild fax ) ফুল, পাহাড়ের ওপারে বেগুনি রঙের দেবকাঞ্চন । t আমাদের গাড়ী এক জায়গায় হঠাৎ থেমে গেল । স্থানটি বড় বড় বনপাদপে ছায়ানিবিড় । রাসবিহারীবাবু বল্লেন, আম্বন বনের মধ্যে । —কোথায় ? —আপনাকে আমাদের শিমুল গাছের নার্সারি দেখিয়ে আনি। —গাড়ী কতক্ষণ থাকবে ? —সে ভয় নেই। যতক্ষণ আমরা ফিরে না আসি । অনেকদূর চললাম বনের মধ্যে। এক জায়গায় অনেকগুলো শিমূলের চার সার দিয়ে পোতা। বনবিভাগ থেকে এখানে শিমুল গাছের আবাদ করা হয়েছে তাই একে বলা হয় শিমূলচারার নার্সারি। এখান থেকে চার তুলে অন্ত জায়গায় রোপণ করা হবে। রাসবিহারীবাবু আমাদের সব বুঝিয়ে দিলেন। শিমুলগাছ নাকি বেশ দামে বিক্ৰী হয় দেশলাইএর কারখানার মালিকদের কাছে । রাসবিহারীবাবু বল্লেন, সাবধানে থাকবেন, বড় বড় বাঘ আছে সারেও ফরেস্টে । –দিনমানে বেরোবে? —সব সময় বেরুতে পারে । —লেপার্ড, না "দি রয়েল বেঙ্গল’ ? ~~রয়েল বেঙ্গলই বটে । —আপনি কখনো বাঘের হাতে পড়েছেন ? —দুবার পড়েও বেঁচে গিয়েছি। চলুন লে গল্প আংকুর বাংলোয় বলে চা খেতে খেতে করা যাবে ।