পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না। ক্ষেত্রবাৰু দীর্ষনিঃশ্বাস ফেলিয়া ভাবেন, কী হইলে আবার আলিয়া গ্রামে বাস করিতে পারেন । পুরানো দিনের স্বথ আবার ফিরিয়া আসে যদি, ক্ষেত্রবাৰু তাহার জীবনের অনেকখালিই যে-কোন দেবতাকে দানপত্র করিয়া দিতে রাজী আছেন। ক্ষেত্রবাৰু গ্রামের প্রজাঙ্গের সঙ্গে পরামর্শ করিতে লাগিলেন। গ্রামে থাকিলে তাহার সংসার চলিবার বন্দোবস্ত হয় কি না ! সকলেই উৎসাহ দিল, ধানের জমি আছে তাহাতে বছরের ভাতের টানাটানি হুইবে না-ক্ষেত্রবাবু গ্রামেই থাকুন। - একদিন নিভাননী বলিল, আর কদিন ছুটি আছে তোমার গো ? ক্ষেত্রবাৰু বলিলেন, কেন —না, তাই বলছি। দিন উনিশ কাটিয়াছে সবে, এখনো প্রায় একমাস। সত্য কথা যদি স্বীকার করিতে হয়, ছুটিটা একটু বেশীই হইয়া গিয়াছে। এতদিন ছুটি না দিলেও চলিত। নিভাননীর দিন আর কাটে না। এখানে সে কথা বলিবার মানুষ খুজিয়া পায় না, ঘুরিয়াফিরিয়৷ সেই বড়-গিী আর তাহার মেয়ে সরল। আর আছে কয়েকটি গোয়ালার মেয়ে। কোন আমোদ নাই, আহলাদ নাই—বন-জঙ্গলের মধ্যে আর দিন কাটিভে চায় না। তাহার উপর উনি নাকি এখানে থাকিবার ব্যবস্থা করিতেছেন, এখানে মানুষ বারমাস থাকিলে পাগল, নয় তো ভূত হইয়া যায়। বাড়ীর পিছনে বাশবনের নীচেই, মিনিট কয়েকের পথ দূরে শীর্ণকায় চুণি নদী, টলটলে কাচের মত জল—রোজ এই বাগানের ভিতর দিয়া স্বানে ধাইবার সময় নিতাননীর ভয় হয়। উচু উচু আমগাছে পরগাছ ঝুলিতেছে, কালপ্যাচার গভীর স্বরে দিন দুপুরেও বুকের মধ্যে কেমন করে। স্নান করিতে নামিয়া কিও মনে বেশ আনন্দ হয়, এত্ত জল এবং এমন কাকের চোখের মভ জল কলিকাতায় কল্পনাও করা যায় না। বঁশের চ্যাল পুড়াইয়। উনানে রান্না-কয়লা নাই, বাড়ীতে জল নাই, নিভাননীর এগৰ অভ্যাস নাই। কলিকাতায় রান্নাঘরের মধ্যেই কলের জলের পাইপ। এখানে মানুষ থাকে ন। সময় যেখানে কাটিতে চাহে না, লে জায়গা আর যাহাই হউক, ভজলোকের বাসের উপযুক্ত নয়। ছেলেমেয়েনেরও এ জায়গা ভাল লাগে না। বড় ছেলে পাচু কেবল বলে, ম, কলকাতায় কবে যাওয়া হবে ? তাহাজের বাড়ীর সামনে ছোট পার্কটাতে প্রতি বৈকালে টুকু হাৰু রণজিৎ হাঁরু, মঙ্গল লিং বলিয়া একটা শিখের ছেলে, স্বরেশ ভার কত ছেলে আলিয়া জোটে। পাচুর লক্ষে উহাদের সকলের খুব ভাব। পার্কে দোলন টাঙানো আছে। গড়াইয়া পড়িবার লোহার ভোঙা খাটানো আছে, রোজ রোল্প লেখানে কত কী খেলা, কত আমোদ-আহ্লাদ । রূণজিতের বাড়ীর কাছেই—প্ৰলা বড়াল লেনে। পাচুর সঙ্গে রণজিতের খুব বন্ধুত্ব—