পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী

ঠিক সময়ে স্কুলে যাইতে পারেন না। স্বতরাং হাবিকে তাহার ভাইবোনের জন্য রান্না করিতে বলিয়া, না খাইয়াই বাহির হইলেন। ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুলে পাঁচ মিনিট লেট হইবার জো নাই। হাসপাতালে গিয়া শুনিলেন, ডাক্তারবাবু দশটার আগে আসেন না । বসিয়া বসিয়া সাড়ে দশটার সময় ডাক্তারের মোটর আসিয়া গেটে চুকিল । ক্ষেত্রবাবুর হাত হইতে চিঠি পড়িয়া বলিলেন, আচ্ছ, আপনি ও-বেলা আমার সঙ্গে একবার দেখা করবেন, এই—ছটার সময় । এ-বেলা বলতে পরিচি নে । ক্ষেত্রবাবু প্রমাদ গনিলেন। ছয়ট পৰ্য্যন্ত এখানে অপেক্ষা করিবেন তো বাসায় যাইবেন কখন, ছেলে পড়াইতেই বা যাইবেন কখন ? , স্কুলের কাজ শেষ হইয়া আসিয়াছে, বেলা চারিট বাজে, এমন সময় সাহেবের ঘরে ডাক পড়িল । ক্ষেত্রবাবু সাহেবের টেবিলের সামনে দাড়াইতেই স্লাহেব বলিলেন, ক্ষেত্রবাবু, দুটো ক্লাসের প্রশ্নপত্র লিথো করতে হবে—আপনি ছুটি হলে কাজটা করে বাড়ী যাবেন। হেডমাস্টারের কথার উপর কথা চলে না, অগত্যা তাহাই করিতে হইল। ছুটির পর মাস্টারদের মধ্যে দুই-একজন বলিলেন, চলুন ক্ষেত্রবাবু, চা খেয়ে আসি। —মনে স্বখ নেই, চা খাব কী, চলুন— সেখানে গিয়া মাস্টারের দল প্রস্তাব করিলেন, স্কুলে একদিন ফিস্ট, করা হোক। হেডপণ্ডিত চা না থাইলেও এখানে উপস্থিত থাকেন রোজ । তিনি ফর্দ করিলেন, প্রত্যেক মাস্টারকে এক টাকা করিয়া চাদ দিতে হইবে । তাহা হইলে একদিন পোলাও রাধিয়া সবাই আমোদ করিয়া খাওয়া যায়। যছবাবু বলিলেন, এক টাকা বড় বেশী হইয়া পড়ে— বারো আনার মধ্যে যাহা হয় হউক । ক্ষেত্রবাবু বলিলেন, মনে হথ নেই দাদা, এখন ওসব থাকৃ। যদুবাবু বলিলেন, কেন, কী হয়েছে ? —বাড়ীতে বড় অস্থখ । হাসপাতালে পাঠাতে হচ্চে কাল। সকলেই নানারূপ ব্যগ্র প্রশ্ন করিতে লাগিলেন। দুই-একজন ক্ষেত্রবাবুর বাড়ী পর্যন্ত গিয়া দেখিতে চাহিলেন । ফিস্ট, খাইবার প্রস্তাব আপাতত মুলতুবী রহিল। সকলেই কম মাহিনায় ংসার চালান, এক পরিবারের মত মনে করেন পরস্পরকে, একজনের দুঃখ সবাই বোঝেন বলিয়াই চায়ের এ মজলিসের বন্ধুদের মধ্যে প্রীতির বন্ধন ঘনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল । ক্ষেত্রবাবুর সঙ্গে নারাণবাবু হাসপাতাল পৰ্য্যস্ত গেলেন। ক্ষেত্রবাৰু বলিয়াছিলেন, আপনি বুড়োমাহ্য, এতটা আর যাবেন না হেঁটে। -বুড়োমানুষ বলে কি মাহুষ নই? ও কী ভায়া, চল, গিয়ে দেখে আসি। , , দুজনে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করিয়া হাসপাতালের সব ব্যবস্থা করিয়া ফেলিলেন এবং পরদিনই নিভাননীকে হাসপাতালে আনা হইল।