পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
২৩

স্ত্রী-পুত্র আছে—তাদের যে কত কি আবশ্যক, তার অবধি নাই। তাই এখানে ভদ্রলোেকরা ব্যস্ততার চক্রে পিষ্ট। জীবন ধীরে সুস্থে চালালে চলে না। যেন কেবলই ভিড় ঠেলে চলিতে হয়। আমাদের দেশেও এইরূপ দুর্দ্দশা দাঁড়িয়েছে। তবে সেখানে এক মুষ্টি অন্নের জন্য দৌড়াদৌড়ি করিতে হয় আর এখানে সাপের খোলসের মতন চিকণসই পরদা ও দারা-সুতের নিমন্ত্রণ খাইবার পোষাকের জন্য ছুটোছুটি করিতে হয়। আমাদের যেমন এক মুষ্টি অন্ন তেমনি এদের পরদা ও বিলাস-বেশ― নহিলে মানসম্ভ্রম একেবারে থাকে না।

আর একটী বড় ভয়ের কথা। এখানকার কর্ম্মজীবী লোকেরা বড়মানুষদের উপর বড় চটা। সে দিন একটী মোকর্দ্দমায় একজন বড় ঘরের মেয়ের ৭৫০৲ টাকা জরিমানা হোয়ে গেছে। এঁর একটী পাগলাটে কন্যা আছে। ইনি তার প্রতি বড় নিষ্ঠুর ব্যবহার করিতেন। তাই বালক-বালিকার প্রতি নিষ্ঠুরতা-নিবারিণী সভা এঁর নামে নালিশ করেছিল। এ আবার বিলাতের এক উদ্ভূট্টে ব্যাপার। মা-বাপ যদি একটু কড়া হয় ত অমনি নিষ্ঠুরতা-নিবারিণী সভার হাতে পড়িতে হয়। যা হউক—জজ এই নিষ্ঠুর মাতাকে কেন জেলে দিলেন না—কেবল জরিমানা করিলেন―এই নিয়ে একেবারে হুলুস্থুল পড়ে গেল। কর্ম্মজীবীরা সংবাদপত্রে ভয়ানক প্রতিবাদ করিতে লাগিল যে কেবল বড়মানুষের ঘর বোলে এই অল্প সাজা দেওয়া হোয়েছে—আমাদের ঘর হোলে নিশ্চয়ই জেল হোত। জজকে একেবারে উস্তম ফুস্তম কোরে তুলেছিল। ইহাতে বেশ বুঝা গেল যে বড়মানুষে আর গরিবে একটা ভয়ানক বিদ্বেষ ভাব দাঁড়াইতেছে। এখানে একটী কর্ম্মজীবীদের বিদ্যালয় আছে। দেশ বিদেশ হোতে ছুতার রাজমিস্ত্রী কামার দরজী—এইরূপ লোকেরা এসে পড়াশুনা করে। তারা এক দিন আমায় নিমন্ত্রণ করেছিল। তাদের সঙ্গে আমার খুব আলাপ হয়েছে।