পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
বিলাত-প্রবাসী

প্রকৃতিকে তারা অবাধে দেখে। এইরূপ মুক্তি দেশে আমদানী করিবার জন্য এরা ব্যস্ত। বাস্তবিক এখানে স্ত্রী-স্বাধীনতা একটা অদ্ভুত কাণ্ড। আমাদের দেশে যে নাই তাহা নয়। ভারতের দাক্ষিণাত্যে স্ত্রী-লােকেরা বাহিরে যায়—বাজার করে ঘুরে ফিরে বেড়ায়। কিন্তু এখানে রকমই আলাদা। দলে দলে স্ত্রীলােকেরা চলেছে—কেহ দৌড়িতেছে—কেহ হাসিতেছে—ভ্রূক্ষেপই নাই। আবার কত স্বামী-স্ত্রী হাত ধরাধরি কোরে চলেছে। যুগল-মূর্ত্তি দেখিলে আনন্দ হয়। কিন্তু যুগল মূর্ত্তির বিশেষ খেলা প্রণয়-সূত্রে চলে—পরিণয়-সূত্রে নহে। প্রায়ই দেখা যায়—কুমার-কুমারীরা বাহুবন্ধনে মিলিত হোয়ে বিহার করিতেছে―কিম্বা আড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে বা বােসে রয়েছে। আমি একটু নির্জ্জন জায়গা পছন্দ করি। তাই অপরাহ্ণে প্রায় ঝােপ ঝাড় ঘেসে বেড়াইতে যাই। বাগানে এ সব ঝােপ তৈয়ারী করা। কিন্তু ক্রমশঃ দেখি যে সবগুলিই প্রেমালাপে পরিপূর্ণ। তাই আমাকে এখন সামলে চলিতে হয়। কিন্তু এখানকার লােকেরা প্রণয়ের সূতো পাকানকে একটা অবশ্যকর্ত্তব্য মনে করে। যাহাদের বিবাহ স্থির হােয়ে গেছে তারা অত ঘােরাঘুরি করে না। কিন্তু বিবাহ স্থির কি অস্থির—সেই তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিবার জন্যই পুরুষ প্রকৃতি কুঞ্জপুঞ্জের বিরলতা খোঁজে। ইহা ভাল কি মন্দ-তার বিচারে আবশ্যক নাই। তবে আমাদের দেশে এই প্রণয়ের কর-পীড়ন বা উৎপীড়ন যাতে না রপ্তানী হয়—সেই দিকে দৃষ্টি থাকিলেই ভাল।

আগামী বারে ঊক্ষপারের বিবরণ লিখিব মনে করিতেছি। ইহা একটী অতি পুরাতন বিদ্যালয়ের স্থান। বাইশটা না তেইশটা কালেজ আছে। এক একটা কালেজ পাঁচ সাত শত বৎসরের। স্থানটী অতি রমণীয়।

ঊক্ষপার তারিখ ২রা জানুয়ারী ১৯০৩।