পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
বিলাত-প্রবাসী

নিজের জাতির উপর ভারি টান বুয়র যুদ্ধে স্বদেশীয়ের রক্তপাত হোয়েছে শুনে গভর্ণমেণ্টের শত্রুরা সব মিত্র হোয়ে গেল আর বুয়র পরাজয়ে একপ্রাণ হয়ে উঠে পড়ে লাগিল। এই ত গেল একতা। ভাল কোরে পর্য্যবেক্ষণ কোরে দেখলে বুঝা যায় যে ইংরেজের—তা কৃষকই হউক বা বণিকই হউক বা অধ্যাপকই হউক―চোখে মুখে পুরুষকার মাখান। প্রকৃতিকে ব্যবহারক্ষেত্রে জয় করিতে সবাই বদ্ধপরিকর। এইরূপ প্রকৃতি জয়ে বেশ একটা নিষ্কাম ভাব আছে। যদি ইংরেজ মনে করে যে অমুক তারিখে কোন তুষারমণ্ডিত তুঙ্গ গিরিশিখরে ধ্বজা গাড়িবে—তাহা হইলে সেই দিনে সেই দুরারোহ স্থানে কেশরিচিহ্নিত নিশান পতপত করিয়া উড়িবেই উড়িবে। উত্তর কেন্দ্রের অপর পারে কি আছে দেখিব—প্রাণ যায় বা থাক্। কত জাহাজ তুষারগর্ভে বিলীন হইল—কত লোক মরিল―তথাপি আবিষ্কার করিবার পণ ভঙ্গ হইবে না। কোন আর্থিক লাভ নাই—কেবল একটা জয়ের আনন্দ—ঈশ্বরত্বের আত্মতুষ্টি—এই জিগীষাকে জ্বালাইয়া রাখে। কিন্তু এই নিষ্কাম ভাব লোপ পাইয়া যাইতেছে। লালসার বহ্নিতে সমগ্র জাতিটা জ্বলিতেছে।

আমাদের সংস্কারকেরা ইংরেজের ঈশ্বরত্ব দেখিয়া স্বদেশকে ধিক্কার দেন ও মনে করেন যে কি কুক্ষণে ভারতে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তাঁহারা হিন্দুর প্রকৃতি-জয়ের কথা বড় একটা বুঝেন না ও বুঝিতে চান না।

হিন্দুর মুখ্য আদর্শ―নিবৃত্তি। প্রকৃতিকে জয় করিয়া নিষ্কাম হওয়া—ঈশ্বরত্ব সম্পন্ন হওয়া—হিন্দুর পরম সাধন। ঈশ্বর হইতে গেলে ঐশ্বর্য্যশালী হইতে হয়। যাহার প্রয়োজনীয় বস্তু ভিন্ন আর কিছুই নাই সে ঐশ্বর্যের অধিকারী নহে। কিন্তু যিনি স্বাধিকারের প্রাচুর্য্য ও বাহুল্য-