পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিলাত-যাত্রী

মুম্বইয়ে জাহাজে উঠিবার আগে ডাক্তারে পরীক্ষা করে—পেলেগ হোয়েছে কি না—আর সব বোঁচকা-বুচকি কলের ভিতর পূরে একরকম ঔষধ দিয়ে ধুয়ে দেয়। আমার জিনিস-পত্তর দেখিতে এলো—দেখে কিছুই নাই। একেবারে অবাক্। একটা ব্যাগ বা পুঁটুলিও নাই। শুধু হাতে বিলেত। ডাক্তার সাহেব একটু এদিক ওদিক চেয়ে একখানা পাস দিয়ে দিলে। আমি একেবারে নবাবের মত গিয়ে জাহাজে উঠিলাম। আর আমার সহযাত্রীদের দুর্দ্দশার সীমা রহিল না। ধাক্কাধাকি ঠেলাঠেলি পুলীশের গুতো খুব চলিতে লাগিল। আমি মনে মনে ভাবিলাম—কৌপীনবন্তঃ খলু ভাগ্যবন্তঃ। এ দুর্দ্দশা কেবল দেশী যাত্রীদের—শাদা-চামড়া দেবদেবীর নহে।

জাহাজে উঠে ভাবিতেছিলাম ভোজনের ব্যবস্থা কি কোরে করিব। মাছ মাংস রুচে না—আর সাহেবেরা তরকারি চর্ব্বি দিয়া রাঁধে। ঘৃত আমাদের নিকট অমৃত—তাহা কিন্তু কর্ত্তারা মুখে করিতে পারেন না— যেমন কপাল। জাহাজ ছাড়িবার সময় বড় গোলমাল। ছাড়িয়া দিলে দেখি যে কতকগুলি সিন্ধুদেশবাসী হিন্দু সওদাগর জাহাজে উঠিয়াছে। কেহ মল্‌টা (Malta) কেহ জিব্রলটার (Gibraltar) কেহ তুনিস (Tunis) যাইতেছে। সিন্ধীরা সর্ব্বত্র ব্যবসায় করিতে যায়। জাপান মার্কিণ ইউরোপ আফ্রিকা সকল স্থানেই ইহাদের দোকান আছে। ইহারা জাতিতে বণিক্‌ কিন্তু মাংস ও মদিরা খায়। সমুদ্রপারে যাইলে ইহারা জাতিচ্যুত হয় না। আমি সিন্ধুদেশে অনেক দিন ছিলাম তাই ইহাদের মধ্যে দুই এক জন আমাকে জানিত। খুব খাতির। সকাল বেলা চা ও হাতগড়া-রুটি—মধ্যাহ্নে ভাত ডাল তরকারি-অপরাহ্ণে চা ও রাত্রিতে রুটি তরকারি। ইহাদের সঙ্গে রাঁধুনি ও চাকর ছিল। সে খালাসিদের চুল্লীতে পাক করিয়া আনিত। বেশ আমোদ-প্রমোদে দিন