পাতা:বিলাপ - অমৃতলাল বসু.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরের স্বর্গে আবাহন।
নেপথ্যে। হা বিদ্যাসাগর। হা বিদ্যাসাগর।
(২য় নাগরিকের প্রবেশ)

 ২য় নাগ। না দেখা যায় না, দাঁড়িয়ে আর দেখা যায় না! এই যে ভাই তুমি এখানে, আমিও পালিয়ে এলেম, এ ভীষণ মর্ম্মাঘাতী দৃশ্য দেখে কার সাধ্য!

(কতিপয় নাগরিকের প্রবেশ)

 ১ম নাগ। স্ত্রীলোকের বলে যে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্য্যাদা বোঝা যায় না, তা যথার্থ। অভাব বিহনে কোন বস্তুর মূল্য উপলব্ধি হয় না, মনুষ্যের মৃত্যুর পরই বোঝা যায় যে তাহার অভাবে সংসারের কি পরিমাণ ক্ষতি হইল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনকালে তাঁহার ব্যক্তিগত মহত্ত্বের নিকট, তাঁহার অগাধ বিদ্যাবৃদ্ধি দয়া দক্ষিণ্যাদি অতুলনীয় বিবিধ সদ্ গুণের সমক্ষে সকলে প্রণত হইত বটে, কিন্তু আজ তাঁর দেহাবসানে এই শ্মশানে যে ভক্তিমিশ্রিত করুণার দৃশ্য দেখিলাম, তাহা সম্ভাবিত বলিয়া কখনও স্বপ্নেও অনুমান করি নাই। উচ্চ নীচ ভেদ নাই, সামাজিক পার্থক্যের বিচার নাই, পদমর্য্যাদার প্রাচীর ভঙ্গ হইয়াছে, দীনতার কুষ্ঠিত ভাব, সন্ত্রমের অভিমান, কুলমহিলার অবগুণ্ঠন, বিদ্যাসাগর বিহনে এ শ্মশানে সকলই আজি শোক সাগরে বিসর্জন হইয়াছে। এই ভাগীরথীতীর সমাগত সহস্ৰ সহস্র নরনারী আজ এক সাধারণ পরিবারের অন্তর্ভূক্ত বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে; একই সমবেদনায় ব্যথিত হইয়া.সকলে যেন এক সংসারের একমাত্র অবলম্বনের জন্য এক প্রাণে সমস্বরে রোদন করিতেছে। এরূপ মৃত্যুর জন্যও মনুষ্য-জন্ম প্রার্থনীয়!