পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহিত একটা কথা কহিয়াছে এ-কথা কোন বাপ ভদ্র-সমাজে কাবুল করিতে চাহিত না-গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম । অনেকদিন মৃত্যুঞ্জয়ের সহিত দেখা নাই। একদিন শোনা গেল সে মর-মার। আর একদিন শোনা গেল, মালপাড়ার এক বুড়া মাল তাহার চিকিৎসা করিয়া এবং তাহার মেয়ে বিলাসী সেবা করিয়া মৃত্যুঞ্জয়কে যমের মুখ হইতে এ-যাত্ৰা ফিরাইয়া আনিয়াছে । অনেকদিন তাহার অনেক মিষ্টান্নের সদ্ব্যয় করিয়াছি-মনটা কেমন করিতে লাগিল, একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে লুকাইয় তাহাকে দেখিতে গেলাম , তাহার পোড়োবাড়িতে প্ৰাচীরের বালাই নাই । স্বচ্ছন্দে ভিতরে ঢুকিয়া দেখি, ঘরের দরজা খোলা, বেশ উজ্জল একটি প্ৰদীপ জ্বলিতেছে, আর ঠিক সুমুখেই তক্তপোশের উপর পরিষ্কার ধপধাপে বিছানায় মৃত্যুঞ্জয় শুইয়া আছে, তাহার কঙ্কালসার দেহের প্রতি চাহিলেই বুঝা যায়, বাস্তবিক যমরাজ চেষ্টার ত্রুটি কিছু করেন নাই, তবে যে শেষ পৰ্য্যন্ত সুবিধা করিয়া উঠিতে পারেন নাই, সে কেবল ওই মেয়েটির জোরে । সে শিয়রে বসিয়া পাখার বা তাস করিতেছিল, অকস্মাৎ মানুষ দেখিয়া চমকিয়া উঠিয়া দাড়াইল । এ সেই বুড়া সাপুড়ে মেয়ে বিলাসী। তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না । কিন্তু মুখের প্রতি চাহিবামাত্রই টের পাইলাম, বয়স যাই হোক, খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে আর কিছু নাই । ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসী ফুলের মত । হাত দিয়া এতটুকু স্পৰ্শ করিলে এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে। মৃত্যুঞ্জয় আমাকে চিনিতে পারিয়া বলিল, কে, ন্যাড়া ? বলিলাম, হু । মৃত্যুঞ্জয় কহিল, ব’লো !