পাতা:বিশ্বকোষ অষ্টাদশ খণ্ড.djvu/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যানগর মুসলমানেরা যেন তাহামের ধৰ্ম্মানুসারে তাহার সমক্ষে ঈশ্বরোপাসনা করিতে পারে। তিনি মুসলমানদিগের নিমিত্ত সে সকল মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন, এখনও সেই সকল মসজিদের তাবশেষ হাম্পা বা হস্তিনাবতী নগরীতে দেখিতে পাওয়া যায়। কেবল দেবরায় বলিয়া নয়, বিষ্ঠানগরের রায়বংশ ধৰ্ম্মমত সম্বন্ধে উদার ছিলেন। র্তাহাদের বিপুল রাজ্যে হিন্দুমুসলমান ও জৈন প্রভৃতি বহুল লোক বাস করিত। ইহার প্রত্যেক ধৰ্ম্মসম্প্রদায়েরই যথেষ্ট মান্ত করিতেন, সকল ধৰ্ম্মেরই মৰ্য্যাদা সংরক্ষণ করিতেন । দেবার (২য় ) রাজনীতিতে অধিকতর স্থপণ্ডিত ছিলেন। পারস্তদূত আবদুল রজাকের লিখিত বিবরণীতে জানা যায় যে, দেবরায়ের ভ্রাতা, দেবরায় ও তাহার দলবলকে নিহত করিয়া স্বয়ং সিংহাসনলাভের মিমিত্ত গোপনে গোপনে অতি কদৰ্য্য অভিসন্ধি করিয়াছিল। ভোজের নিমন্ত্রণবাপদেশে দেবরায়ের এই দুষ্ট ভ্রাতা দেবরায়ের অনেক সভাসদকে নিহত করিয়া অবশেষে দেবরায়কেও ছলনা করিয়া নিমন্ত্রণালয়ে লইয়া যাইয়া নিহত করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু দেবরায় মনে স্বভাবতঃই ভ্ৰাতায় দুষ্ট চেষ্টার কথা উদিত হইল। দুৰ্বত্ত এই স্থানেই তাহাকে তরবারি প্রহারে জর্জরিত করিল, তিনি মুতের দ্যায় পড়িয়া রহিলেন। তঁহায় দুষ্ট ভ্রাতা তাহাকে মৃত মনে করিয়া চলিয়া গেল, কিন্তু ভগবানের কৃপায় তিনি রক্ষা পাইয়া পরিশেষে দুষ্ট ভ্রাতাকে সমুচিত শিক্ষাদান করিয়াছিলেন। আবদুল রজাক স্বয়ং বিদ্যানগরে গিয়াছিলেন । আবদুল রজাক আরও বলেন, ১৪৪৩ খৃষ্টাব্দের শেষার্দ্ধে দেবরায়ের উজীর দাননায়ক গুলবর্গ আক্রমণ করেন। এই ঘটনার সহিত ফেরিস্তা-লিখিত ঘটনার সামঞ্জস্ত দৃষ্ট হয়। আবদুল জাক বলেন, দেবরায়ের ভ্রাতার দুষ্ট চেষ্টায় বিষ্ঠানগরে যে দুর্ঘটন ঘটিয়াছিল, আলাউদ্দীন সে ংবাদ পাইয়াছিলেন । এই অবসরে দেবরায়কে নিৰ্য্যাতিত করা সুবিধাজনক মনে করিয়া তিনি বাকী কর চাহিয়া পাঠান। দেবরায় ইহাতে উত্তেজিত হন। উভয়ের সীমান্তে এই ঘটনায় তুমুল সংগ্রাম ঘটে। আবদুল রজাক বলেন, গান নায়ক গুলবর্গে প্রবেশ করিয়া অনেকগুলি বন্দী সহ প্রত্যাবর্তন করেন । ফেরিস্তা বলেন, দেবরায় অনর্থক বাহ্মণীরাজ্যের মুসলমানদিগকে আক্রমণ করিয়াছিলেন, তিনি তুঙ্গভদ্র পার হইয়া মুদগলেয় দুর্গ অধিকার করেন, রায়চুড় প্রভৃতি স্থান দখল করার জন্ত পুত্রদিগকে প্রেরণ করেন। তাহার সৈন্তগণ বিজাপুর আক্রমণ করেন। দেবরায়ের সৈন্তগণ এই সকল স্থানের অবস্থা শোচনীয় করিয়া ফেলিয়াছিল। অপরপক্ষে আলাউদ্দীন এই সংবাণ পাইয়। তেলিঙ্গন, দৌলতাবাদ ও বেরার হইতে সৈন্ত [ a aь ] বিদ্যানগর সংগ্ৰহ করিয়া আন আন্ধাদেশের করেন। এই সময়ে র্তাহার অশ্বারোহী সৈন্তের সংখ্যা ৫০,••• এবং পদাতিক ৬০,০০০ সংখ্যায় পরিণত হইয়াছিল। এই সময়ে দুই মাসের মধ্যে তিনটা তুমুল যুদ্ধ হয়—এই যুদ্ধে উভয়পক্ষের বিস্তর ক্ষতি হইয়াছিল—হিন্দুরা প্রথমে জয়লাভ করিয়াছিলেন, কিন্তু অবশেষে খান জমানের আঘাতে দেবরায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র প্রাণ পরিত্যাগ করেন। এই শোচনীয় ব্যাপারে হিন্দুগণ রণভঙ্গ দিয়া মুগলের দুর্গে পলায়ন করেন। অবশেষে দেবরায় সন্ধি করিয়া এই বিবাদের অবসান করেন । অধুনা অনেকগুলি শাসন ও শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাহাতে জানা যায় যে, ধীরপ্রতাপ দেবরায় মহারায় ভারতবর্ষের দক্ষিণপ্রান্ত পৰ্য্যস্ত স্বীয় শাসনপ্রভাব পরিচালন করিয়াছিলেন । মদুর জেলায় তিরুমলয় প্রভৃতি স্থানেও দেবরায়ের দেবকীৰ্ত্তির চিহ্ন পরিলক্ষিত হইতেছে। দেবরায় সমগ্র দাক্ষিণাত্য, ভারতের দক্ষিণ গ্রান্ত ও পূর্বের্মণকুল পৰ্য্যন্ত স্বীয় রাজ্য বিস্তার করিয়াছিলেন । ইহঁার সময়ে বিদ্যানগরের সম্ভার অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়—মুসলমানদিগকে সাময়িক কাৰ্য্যে নিযুক্ত করিয়া ইনি সৈম্ভবল বৃদ্ধি করেন। দেবরায়ের সময়ে রাজস্ব অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছিল। “গজবেণ্টকর” নামে ইনি একটী বিশিষ্ট উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। ইনি নিজে অসামান্ত বীর ছিলেন অথচ ই হার হৃদয়ে যথেষ্ট দয়া ছিল। উত্তরে ভেলিঙ্গন এবং দক্ষিণে তাঞ্জোর পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগে ইনি স্বয়ং পরিভ্রমণ করিয়া দেশের অবস্থা অবগত হইতেন । ফেরিস্তায় লিখিত হইয়াছে, আলাউদ্দীন দেবরায়ের নিকট বাকী কর চাহিয়াছিলেন। দেবরায়ের নিকট কর চাহিবার আলাউদ্দীনের কি অধিকার ছিল, তাহা বুঝিয়া উঠা ভার । বর্তমান ঐতিহাসিকগণ ফেরিস্তার এই উক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারেন নাই। ফলতঃ কৃষ্ণানদীর সীমা হইতে কুমারিকা অন্তরীপ পৰ্য্যন্ত যাহাদের শাসনদও পরিচালিত হইত, র্তাহার আলাউদ্দীনের করদ রাজা বলিয়া স্বীকার করিবেন, ইহা সম্ভবপর নহে। তবে যুদ্ধবিগ্রহে পরাজয়ে সন্ধি উপলক্ষে কিঞ্চিৎ অর্থদান করা অসম্ভব নহে। দেবরায় মল্লিকার্জন ও বিরূপাক্ষ এই দুই পুত্র রাখিয়া পরলোকে গমন করেন । দ্বিতীয় দেবরায়ের মৃত্যুর পর কে বিদ্যানগরের সিংহাসনে সমারূঢ় হুয়েন, ইহা লইয়া প্রাচীন ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মনিৰঞ্জন। যথেষ্ট মত ভেদ আছে। কিন্তু অধুনা যে সকল তাম্রশাসন ও শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, সেই সকল আলোচনা করিয়া দেখা গিয়াছে যে, ২০ খানি শিলালিপিতে অবিসংবাদিত ভাবে লিখিত হইয়াছে যে দেবরায়ের মৃত্যুর পরে